অনুবাদ করুন ।

শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৩

ওয়াদি জ্বীন । ( সৌদি আরবের ভয়ংকর বিস্ময়কর স্থান )

ওয়াদি জ্বীন , মদিনা মোনাওয়ারার আল বায়দা উপত্যকায় অবস্থিত , পৃথিবীর  বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে একটি । যদিও সৌদি সরকারের কঠোর নীতি কারণে এই দর্শনীয় স্থানটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজরে তেমন ভাবে আসেনি ।ওখানে কোন স্থানিয় সৌদি ট্যাক্সি চালক যাবে না। কারন সৌদিরা ওয়াদি জ্বীন এলাকায় যেতে ভয় পায় । পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ানী ও বাঙ্গালী অনেক ট্যাক্সি চালকেরা যায় ।
ওয়াদি জীন  জায়গাটির অবস্থান মদিনার আল বায়দা উপত্যকায় ।
উপত্যকাটি মসজিদে নববীর উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলো মিটার দুরে অবস্থিত। এলাকাটি কালো কালো বড় বড় ভয়ংকর পাহাড়ে ঘেরা। কালো কালো বিশাল পাহাড়গুলো দেখতে ভয়ংকর লাগে।
২০০৯-২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার এই ওয়াদি জীন নামক স্থান দিয়ে একটি রোড বানানোর পরিকল্পনা করে এবং হাজার হাজার শ্রমিক কাজে লাগায় এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য , কিন্তু সমস্যা হলো কাজ করার যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে অটোম্যাটিক যাওয়া শুরু করে দেয় । পিচ ঢালাই করার জন্য বড় বড় রোলার গাড়ি গুলো বন্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠতে থাকে এবং মদিনা শহর মুখি হয়ে রওনা দেয় । শোনা যায় এমন কি পেপসির বোতল পানির বোতল বা পানি রাস্তায় ফেললেও সেইটা নিচের দিকে না গিয়ে উপরে মদিনার দিকে যাওয়া শুরু করে  আর এই দেখে শ্রমিকরা ভয় পেয়ে যায় এবং মাত্র ৩০-৪০ কিঃমিঃ রাস্তাটি করার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায় । রোডটি যেখানে কাজ বন্ধ করা হয় সেখানে চারি দিকে বিশাল বিশাল কালো কালো পাহার তাই শেষ মাথায় গোল চক্করের মতন করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । রাস্তাটি ২০০ কিঃমিঃ হওয়ার কথা ছিল,কিন্তু শ্রমিকরা প্রচণ্ড ভয় পাওয়ায় এবং এই রাস্তায় গাড়ি এক্সিডেন্ট হতে পারে এই ভেবেই এখানেই কাজ সমাপ্ত করা হয় ।
 এই রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে গিয়ার নিউট্রালে রাখলে ১২০ কিঃমিটারেরও বেশি স্পীডে গাড়ি চলে!
সবাই মনে করে ওয়াদি জ্বীন নাম স্থানে গাড়ি নিয়ে গেলে জীনেরা গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয় , তবে জ্বীনেরা মানুষ মেরেছে এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি , কারণ লোক মুখে শুনা যায় , নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম) এর সাথে নাকি এই এলাকার জ্বীনদের সাথে এমনই চুক্তি হয়ে ছিল যে, তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবেনা এবং মানুষ ও তাদের এই এলাকায় আসবেনা , তাই হয় তো জ্বীনেরা কোন ক্ষতি না করে গাড়ি ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দেয় , এমন আরো অনেক রটনা আছে এই নিয়ে ।
 সৌদি সরকার বেশ কিছু দিন এই রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল কিন্তু পরে আবার চালু করে দেয় । এই রাস্তাটি সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয় , বিকাল ৪ টার পর আর কোন গাড়ি বা মানুষকে ওয়াদি জ্বীনের এলাকায় যেতে দেওয়া হয় না ।
এই ব্যাপারে ভিডিও ইউটিউবে আছে দেখতে চাইলে সার্চ দিন। কিন্তু উইকিপিডিয়াতা এই ব্যাপারে কোন তথ্য জানতে চাইলেও পাবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

নামাজ .




সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার।চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট দুপুর তিনটা বাজে বন্ধ হয়ে যায়। সকালে বাসা থেকে তৈরী হয়ে এসেছিলাম তাই দোকান বন্ধ করে সোজা বহদ্দার হাট বাস ষ্টেশনে চলে এলাম। কক্সবাজারগামী বাসে উঠলাম যদিও আমি যাব দোহাজারী।
যাওয়ার কারণটা আগে বলি আমাদের ক্রয় করা একটা জায়গার ব্যাপারে সালিশ ছিল। সালিশটা হবে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনয়নে। কারন যাদের থেকে জায়গাটা কিনেছি তাদের কিছু ওয়ারীশ ওখানে থাকে। তাই ওখানে শুক্রুবার গ্রাম্য সালিশ হবে সেই সালিশে ওদের থেকে ওয়ারীশ হিসেবে জায়গার দলিলে কয়েকটা স্বাক্ষর নিতে হবে।
ধোপাছড়ি ইউয়নিয়ন চন্দনাইশ উপজেলায় হলে কি হবে জায়গাটা দূর্গম এলাকা। যাতায়াত ব্যাবস্থা যাছ্ছে তাই অবস্থা। চট্টগ্রাম থেকে বাসে যেতে হবে দোহাজারী তারপর দোহাজারী থেকে রিক্সায় যেতে হবে টেক্সি স্টান্ডে। সেখান থেকে বেবি টেক্সিতে প্রায় আধা ঘন্টা যাত্রা করে যেতে হবে শংখ নদীর ঘাট, সেখান থেকে বোটে প্রায় দুই ঘন্টা চড়ে যেতে হবে ধোপাছড়ী। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে লাগে প্রায় তিন ঘন্টা। কক্সবাজারের চার ভাগের এক ভাগ রাস্তা ধোপাছড়ী যেতে লাগে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা। তবে যাত্রার কষ্টটুকু মেনে নিয়ে কেউ যদি দিনের বেলা ধোপাছড়ী যায় তাহলে দেখতে পাবে প্রকৃতির অপরুপ রুপ। যা শুধু দেখা যায় উপভোগ করা যায় কিন্তু বোঝানো বা লেখনির ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এতই সুন্দর সেই রুপসী প্রকৃতির অপরুপ রূপ। শান্ত শংখ নদীর দুই পাশে গাছগাছালী আর পাখপাখালী ভরা সবুজ পাহাড় নদীর দুই পাড়ের ঢেউয়র সাথে করছে কত গোপন কানাকানি। তাদের এই ভাবের কথার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ বোঝে কার সাধ্য। শুধু শুনেই কান জুড়িয়ে যায়, বুজতে পারলে হয়ত পাগল হয়ে যাবে মানুষ। গোধুলী বেলার আকাশ শংখ নদীর টলটলে সছ্ছ পানিতে নিজের চেহারা দেখে, মেঘে লাল রং মেখে নিজেকে সাজিয়ে নিছ্ছে রাতের তারাদের বরন করার জন্য। মনে পড়ে যায় সেই গানটি হায়রে আমার মন মাতানো দেশ .....।
প্রায় ঘন্টা দেড়েক পড়ে দোহাজারী নামলাম। আছরের নামাযের সময় হয়ে গেছে অনেক আগে, তাই বাস থেকে নেমেই অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর একটা রিক্সা ভাড়া করে টেক্সি স্টান্ডে গেলাম। তখন প্রায় গোধুলী লগন। যাই হোক টেক্সি চলতে লাগল। গোধুলী বেলায় গ্রামের রাখাল, গরূ, ছাগল, হাস, মুরগীর ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখতে দেখতে শংখ নদীর ঘাটে এসে যখন পৌছলাম তখন মাগরীবের আযান দিছ্ছে।

শংখনদীর ঘাটটা খুবই সাধারণ একটা ঘাট। টেক্সি ষ্ট্যান্ড আছে।বেড়ার তৈরী একটি ভাংগা চোরা একটা হোটেল। হোটেলের মেঝেটা যেন পার্বত্য এলাকার ম্যাপ। ভীষন রকমের উচুনিচু । নড়বড়ে কয়েকটা চেয়ার-টেবিল আছে। আছে কিছু গ্রাহক। যারা সবাই বলতে গেলে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের গ্রাম্য লোক। টেক্সি ড্রাইভাররা এখানে বসে না। ওরা দোহাজারীতে নাস্তা করে।
মাগরীবের নামাজের সময় ফাগুনের প্রথম দিকে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়। তাই এই মসজিদ বিহীন জায়গায় কিভাবে নামাজ পড়া যায় এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। সেই সাথে পড়ে গেলাম আরেক বিপদে। শীত কালে নদীতে পানি কমে যায়। নদীর নাব্যতার অভাবে নদীর কিছু কিছু জায়গায় ডুবো চর জেগে উঠে। এতে রাতের অন্ধকারে বোট চালানো অসম্ভব হয়ে যায়। তাই মাগরীবের সময়ই শেষ বোটটা ধোপাছড়ীর উদ্দেশে চলে যায়। আমি ঘাটে যেয়ে অপেক্ষারত যাত্রীদের জিগ্গাসা করলামঃ শেষ বোটটা আসতে কতক্ষন লাগবে ?
ওরা ঘাটে দাড়িয়ে নদীর যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখে বললঃ আরও বেশ কিছুক্ষন দেরী হবে।
আমি বললামঃ ভাই আমি মাগরীবের নামাজ পড়তে যাছ্ছি। এরমধ্যে যদি বোট আসে একটু অপেক্ষা করতে বলবেন।
লোকটি মাথা কাত করে বললঃ ঠিক আছে।
আমি এবার দ্রুত এসে নামাজের জায়গা খুজতে লাগলাম। ঘাটের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নামাজ পড়ার সুবিধাজনক কোন স্থান না পেয়ে হোটেলে ঢুকলাম। ক্যাশে বসা লোকটিকে বললাম ঃ ভাই এখানে নামাজ পড়ার কোন জায়গা নাই?
লোকটা মাথা নেড়ে বললঃ না। এখানে নামাজের কোন বন্দোবস্ত নাই।
ঃএকটা জায়নামাজ হবে ? তাহলে আমি এখানে কোথাও নামাজটা পড়ে নেব। লোকটা কিছুক্ষন চিন্তা করে একটা ছেলেকে ডাক দিয়ে বললঃ তাড়াতাড়ি অমুকের বাসায় যা। যেয়ে বলবি একজন নামাজ পড়বে জায়নাজটা দিতে বলেছি। ছেলেটা দৌড়ে চলে গেল। মোটামুটি তাড়াতাড়ি একটা জায়নামাজ নিয়ে এল। আমি ছেলেটার হাত থেকে জায়নামাজটা প্রায় ছিনিয়ে নিলাম। এর মধ্যেই নামাজের জায়গা ঠিক করে ফেলেছি ।কেননা হোটেলের মেঝের যে অবস্থা ওখানে জায়নাজ বিছিয়ে নামাজ পড়া অসম্ভব। হোটেলের একপাশে মাচা বাধা ছিল। হয়ত রাতে কর্মচারীরা ওখানে ঘুমায়। আমি ওখানে উঠে বসে বসে নামাজ পড়লাম কারন দাড়িয়ে পড়তে গেলে মাথা দোকানের চালের সাথে লাগবে। শুধু ফরজটুকু পড়লাম। তারপর জায়নামাজটা ক্যাশে বসা লোকটার হাতে দিয়ে দ্রুত ঘাটে এলাম । ঘাটে এসে দেখি ফাকা ঘাট। অপেক্ষারত যাত্রী বোট কিছুই নাই। আমি হতভম্ব সেই সাথে হতাশ। এখন হয়ত আবার দোহাজারী তারপর চট্টগ্রাম ফেরৎ যেতে হবে। মনের ভেতর শয়তান কুমন্ত্রনা দিতে লাগল নামাজ পড়ার কি দরকারটা ছিল? পরে কাজা পড়া যেত না। কিন্তু শয়তানের কুমন্ত্রনা সত্বেও মনের ভেতর কে যেন বলছেঃ ধৈর্য ধর এবং চেষ্টা কর।
আমি জানি চলে যাওয়া বোটটা আজকের শেষ বোট তারপরও না জানি কিসের আশায় ঘাটে দাড়িয়ে রইলাম জানি না। হঠাৎ মনে পড়ল এখন থেকে বোট রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। নদীর পাড়ে কয়েকটা বোট দাড়িয়ে আছে আমি এক বোট ওলার সাথে আলাপ করলাম। সে বলল আড়াইশ ( দুইশত পন্চাশ) টাকা লাগবে। বোটের ভাড়া শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কোথায় বোটের যাত্রী প্রতি ভাড়া ১২টাকা কোথায় ২৫০টাকা ! আবার শয়তান কুমন্ত্রনা দিতে লাগল। আমি পাত্তা না দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম। আজকে যে ভাবেই হোক যেতে হবে। কিন্তু কিভাবে?
আমার এভাবে বোটের ওখানে যাওয়া দরদাম করে ফিরে আসা আবার হতাশ ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থাকা এসব কান্ড ঘাটে বসা হালকা পাতলা গড়নের একটি ছেলে লক্ষ্য করল। সে বুঝতে পারল আমি শহর থেকে এসেছি। ধীরে ধীরে ছেলেটি আমার নিকটে এল। সালাম দিল । জবাব দিলাম ।
ঃ ভাইয়া আপনিকি কোন সমস্যায় পড়েছেন?
আমি বিরক্ত ভাব নিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বললামঃ হ্যা। ধোপাছড়ী যাওয়ার শেষ বোটটা ধরতে পারিনি।
ঃতাহলে রিজার্ভ বোট নিয়ে চলে যান।
্‌যে ভাড়া চাছ্ছে কি করে যাব?
ঃ কত চায়?
ঃ ২৫০ টাকা।
ছেলেটা কিছুক্ষন চুপ করে রইলঃ ওখানে কার কাছে যাবেন।
ছেলেটির এই প্রশ্নে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। কি জ্বালারে একেতো শেষ বোটটা হারিয়েছি তার উপর এ কোন ফ্যাসাদ জুটল। এখন কথা বলতে ইছ্ছে করছে না আর এই ব্যাটা একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাছ্ছে। বিরক্ত লাগলেও ভদ্রতার খাতিরে কিছু না বলে উত্তর দিতে লাগলাম।
আমার আত্তিয়র পরিচয় দিলাম। চিনতে পারল কিনা বুজতে পারলাম না।এবার ছেলেটি বললঃ আপনি একটা কাজ করেন ঐ যে ওখানে চারজন লোক বসে আছে ওখানে দুইজন বনবিভাগের লোক।
আমি ছেলেটির নির্দেশিত দিকে তাকালাম দেখতে পেলাম অদুরে চারজন লোক দুইটা বেশ বড় বড় গাছের গুড়ির উপর বসে কথা বলছে। দুইজন লুংগী পরা একজন খাকি রং এর পোষাক পরা বোঝাই যাছ্ছে লোকটি সরকারি বাহিনীর লোক। অর্থাৎ সে ফরেষ্ট গার্ড। চতুর্থ জনের পোষাক সিভিল হলেও কিছুটা পরিপাটি বুজতে পারলাম ইনি বন বিভাগের অফিসার।

ছেলেটি বললঃ এনারা ধোপাছড়ী বনবিভাগের লোক। ওনারা ঐ বোটটা (নদীর ঘাটে বাধা চারটা বোটের মধ্যে কোনটা দেখাল বুজতে পারলাম না।) নিয়ে ধোপাছড়ী যাবে। আপনি অফিসারকে অনুরোধ করে দেখুন। হয়ত আপনাকে নিতে পারে।
আমি ছেলেটির কথায় আশান্বিত হলাম। ছেলেটিকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি অফিসারের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে ওনার দিকে আসাতে দেখে অফিসার আমার দিকে জিগ্গাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
ঃ আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
ঃবলুন।
ঃ আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি ধোপাছড়ী যাওয়ার উদ্দেশে। কিন্তু এখানে এসে মাগরীবের নামাযের সময় হয়ে গেছে বিধায় নামাজ পড়তে যেয়ে আজকের শেষ বোটটা ধরতে পারি নাই। একজনের কাছ থেকে জানলাম আপনারা ধোপাছড়ী যাবেন। তাই অনুরোধ করছি আপনাদের সাথে যদি আমাকে নিয়ে যান তাহলে আমি উপকৃত হব। তানা হলে আমাকে চট্টগ্রাম ফিরে যেতে হবে।
অফিসার আমার বক্তব্য শুনে বললেনঃ আপনি ওখানে কার কাছে যাবেন ?
আমি আমার আত্তিয়র পরিচয় দিলাম ( আত্তিয়টি ওখানকার সারের ডিলার ও বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটির বড় গোছের নেতা ।) তাই পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে চিনতে পারলেন। তিনি বললেন অসুবিধা নাই। একটু অপেক্ষা করুন এখানকার কাজগুলো সেরে আমরা রওয়ানা দেব। দশ পনের মিনিট পরই আমরা রওয়ানা দিলাম ।
সন্ধ্যার মায়াবী আধারে শংখ নদীর বুক চিড়ে চলছে বনবিভাগের বোট। আমরা তিন জন বোটের ছাদে মাদুর বিছিয়ে বসে আছি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাসে শরীর মন দুই জুড়িয়ে যাছ্ছে। আল্লাহ রহমানুর রহিমের করুনার কথা ভেবে, আমার দুই চোখ নোনা জলে টলমল করছে। এই বুঝি নোনা জল কপোল বেয়ে আছড়ে পড়ে শংখ নদীর বুকে। নিজেকে বার বার তিরষ্কার করছি। শেষ বোট না পেয়ে কত কিছুই না ভাবেছি। ঐ বোটে গেলে কত কষ্ট করে যেতে হত। ছাদের নিচে গুমটি ঘরের মত চিপা জায়গার মধ্যে অনেক লোকের সাথে গাদাগাদি করে বসতে হত। সেখানে ইন্জিনের ধোয়া আর ভটভটি বিকট আওয়াজে কান আর মাথার দফারফা হয়ে যায়। সেই সাথে বোট ভাড়াত আছেই। আর এখন, কত আরামে ফাগুনে হাওয়ায় গা জুড়িয়ে নদীর ঢেউয়ের দোল খেতে চলছি। আকাশে সূর্যের রক্তিম আভা এখনও লেগে আছে। নদীর পাড়ের গ্রামের বউ-ঝিরা কলসী ভরে রাতের পানি নিছ্ছে। খেতের কাজ শেষে চাষী-কামলা হাত-মুখ ধুয়ে নিছ্ছে। বিশাল ঝাক বেধে চেনা-অচেনা পাখিরা নদীর পাড়ের গাছগাছালির আড়ালে রাতের রাতের সুখ খুজে নিছ্ছে। আর আমি আমার আল্লাহর বার বার ক্ষমা চাছ্ছি আর শুকরিয়া আদায় করছি। হূদয়ের অন্তস্থল থেকে বার উচ্চারিত হছ্ছে আল্লাহ তুমি কত দয়াময়।
আরেকটি কথা না লিখলেই নয়। আমরা ধোপাছড়ী পৌছেছিলাম লোকাল বোটটির প্রায় বিশ মিনিট আগে।
(ঘটনাটি প্রায় আট বছর আগের)

দৃষ্টি সংযত করার ২০ টি উপায়

১। সবসময় মনে রাখা যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন, আপনি যেখানেই যান আল্লাহ আপানার সঙ্গেই আছেন (তাঁর সর্বময় জ্ঞানের মাধ্যমে) হতে পারে আপনি লুকিয়ে আপনার পাশের জনকে দেখছেন যা সে জানে না, কিন্তু আল্লাহ তা জানছেন।

يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ

চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন। (সূরা গাফিরঃ১৯)

২) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, মিনতি সহকারে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ বলেন-

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। (সূরা গাফিরঃ৬০)

৩)সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যা যা নেয়ামত উপভোগ করছেন তার সবই আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছেন, আর এ জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহর দেওয়া দৃষ্টির নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে আপানাকে আপনার চোখ দুটিকে সে সব জিনিস দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে যা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ভাল কাজের প্রতিফল কি ভাল ছাড়া কিছু হতে পারে?

وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ

তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। (সূরা নামলঃ৫৩)

৪) নিজের সাথে সংগ্রাম করা, দৃষ্টি নত রাখার জন্য নিজে নিজে অভ্যাস করার চেষ্টা করা এবং এ কাজে ধৈর্যশীল হওয়া ও হাল ছেড়ে না দেওয়া। আল্লাহ বলেন-

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। (সূরা আনকাবুতঃ ৬৯)

৫) এমন সব স্থান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা যেখানে নিষিদ্ধ দৃষ্টির প্রলোভনে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে হয়। যেমন, মার্কেট, বিপনী বিতান, পর্দাহীন দাওয়াতের আসর, রাস্তা ঘাটে অলস আড্ডা, ইন্টারনেটে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি ইত্যাদি। রসুল (সাঃ) বলেছেন-

তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা আর এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তিনি বললেন, “যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবা রাস্তার হক আদায় করবে।” তারা বলল, রাস্তার হক কি? তিনি (সাঃ) বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করা।’ (বুখারী ২৩০৩; ইফা)

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য। এখানেও নিজের দৃষ্টিকে (নিষিদ্ধ সাইট, অন্যের প্রোফাইল অকারণে দেখার মাধ্যমে) যত্রতত্র নিক্ষেপ করা, কাউকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করা, অর্থহীন আলোচনায় লিপ্ত হওয়া অনুমোদনযোগ্য নয়।

৬) সবসময় এটা মনে রাখা যে, পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বা প্রলোভন যতই বড় হোক, আপনার মনের ভেতরে যতই আবেগের তাড়না আসুক, এই ব্যপারে আপনার আর কোন পথ খোলা নেই। আপনাকে সব জায়গায়, সব সময় নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দৃষ্টি সংযত করতেই হবে। আশেপাশের কলুষিত পরিবেশের অজুহাত দিয়ে বা আপনি প্রলোভনের শিকার হয়েছেন এসব কথা বলে নিজের দোষের সপক্ষে যুক্তি দেখানোর কোন অবকাশ নেই।

৭) বেশী বেশী করে নফল ইবাদত করা, কারণ নিয়মিত ফরজ এবাদতের সাথে সাথে নফল ইবাদত করে নিজের শারীরিক কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন,

“...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। আমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী শোনে)আমিই তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী দেখে) আমিই তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হাত দিয়ে কাজ করে) আমিই তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী চলে) সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাঁকে আশ্রয় দেই।...” [সহীহ বুখারী ৬০৫৮]

৮) এটা মনে রাখা যে আমরা যে জমীনের উপর গুনাহ করি, সেই জমীন আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের গুনাহের সাক্ষী দেবে। আল্লাহ বলেনঃ

يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا

সেদিন সে (পৃথিবী) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। (সূরা জিলজালঃ ৪)

৯)যে আয়াত দৃষ্টিকে এদিক সেদিক অযথা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে তা মনে করা। যেমনঃ

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা নুরঃ৩০]

১০। অপ্রয়োজনীয় এদিক সেদিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা, শুধুমাত্র যা দেখা প্রয়োজন সেদিকে তাকানো; বিশেষ করে এমন জায়গায় অযথা দৃষ্টি না ফেরানো যেখানে এমন প্রলোভনের আশঙ্কা থাকে যা থেকে সহজে মুক্ত হওয়া কঠিন। হতে পারে সেটা আপনার আশেপাশের দৃশ্যে, বা কোন ম্যাগাজিনে, টিভিতে, অথবা ইন্টারনেটে।

১১) বিয়ে হল একটি কার্যকরী প্রতিকার। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন-

“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে; এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে।” (সহীহ বুখারী ৪৬৯৬, ইফা)

১২) বেহেশতের হুরদের কথা মনে করা; আল্লাহ আপনাকে যা নিষেধ করেছেন তা দেখা হতে নিজেকে বিরত রাখতে উৎসাহিত করবে, যাতে আল্লাহর এই নেয়ামতের পাওয়ার আশা করতে পারেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন-

‘জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সমস্ত দুনিয়া আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর নাসীফ (ওড়না) দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ (সহীহ বুখারী ৬১২১; ইফা)

১৩) যার প্রতি আকৃষ্ট বোধ করছেন তার ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করা...

১৪) যত্রতত্র দৃষ্টি নিক্ষেপের কুফল, এর শাস্তি ও তার যন্ত্রণার কথা চিন্তা করা।

১৫) দৃষ্টি অবনত রাখার সুফল সম্পর্কে চিন্তা করা।

১৬) মানুষের সঙ্গে আলচনার আসরে, জনসমাবেশে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা, এর কুফল সম্পর্কে ব্যখ্যা করা।

১৭) যেসব পোষাকে, চালচলনে, কথাবার্তায় সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয় ও অন্যকে আকৃষ্ট করে এমন সব কিছু পরিহার করতে নিজের পরিবার ও আত্মীয়দেরকে উপদেশ দেওয়া।

১৮) যেসব কুচিন্তা ও শয়তানের ওয়াসওয়াসা মনে জাগে তা আপনাকে কাবু করে সেই অনুযায়ী কাজে পরিণত করার আগেই সাথে সাথে তা ঝেরে ফেলা। যে প্রথম দৃষ্টিতেই নিজেকে সংযত করে নেয় সে অনেক সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে; কিন্তু যে নিজেকে এই কাজেই লিপ্ত রাখে সে কখনও দৃঢ়তার সাথে মন থেকে এর কুপ্রভাব দূর করতে পারে না।

১৯) মৃত্যুর সময় নিজের কর্ম নিয়ে গভীর অনুশোচনার কথা জীবন থাকতেই চিন্তা করা ও এই করুন পরিনতির কথা চিন্তা করে ভীত হওয়া।

২০) সৎসঙ্গে থাকা। কারন মানুষ যাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের বৈশিষ্ট্য দিয়েই প্রভাবিত হয়। আর তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচরের অনুসরণ করে; এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধুই মানুষকে তার নিজের পথে টেনে নেয়। আপনি যদি এমন বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন যাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই হল অন্য নারীদের নিয়ে আলোচনা করা, হারাম দৃষ্টি নিক্ষেপ করা, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আপনার জন্য দৃষ্টি সংযত রাখা দুরূহ। অন্যদিকে আপনি যদি এমন মানুষের সঙ্গে থাকেন যিনি এই বিষয়ে সদা সতর্ক, স্বাভাবিকভাবেই তখন আপনি ইচ্ছা থাকেলও এই হারাম কাজ প্রকাশ্যে করতে সংকোচ বোধ করবেন। অতএব সঙ্গ নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিজের স্বার্থেই।

সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

আসুন, আরেকবার ৫ কালেমা স্মরণ

. কালিমায়ে ত্বাইয়্যিবাহ-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم
(লা.. ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থঃ আল্লাহ পাক ছাড়া কোন ইলাহ (মা’বুদ) নেই, আর সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর রসূল।

২. কালিমায়ে শাহাদাহঃ

اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله صلی الله علیه وسلم
(আশহাদু আল্লা.. ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে; আল্লাহ পাক ছাড়া কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আব্দ (বান্দাহ) ও রসূল।

৩. কালিমায়ে তাওহীদঃ

لا اله الا انت واحدا لا ثانی لک محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم امام المتقین ورسول رب العلمین.
(লা.. ইলাহা ইল্লা আংতা ওয়াহ্ দাহ লা.. ছানীয়া লাকা মুহাম্মাদুর রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইমামুল মুত্তাক্বীনা ওয়ার রাসুলু রব্বিল আলামীন)
অর্থঃ আপনি (আল্লাহ পাক) ছাড়া কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই। আপনি এক, আপনার কোন দ্বিতীয় নেই। আর সাইয়্যিদুনা মুহম্মদুর রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুত্তাক্বীনগণের ইমাম ও সমস্ত জগতের রব-এর পক্ষ থেকে রসূল।

৪. কালিমায়ে তামজীদঃ

لا اله الا انت نورا یهدی الله لنوره من یشاء محمد رسول الله صلی الله عیه وسلم امام المرسلین وخاتم النبین.
অর্থঃ আপনি ছাড়া কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই। আপনি আলো দানকারী। আল্লাহ পাক তাঁর নূর (বা অনুগ্রহ) দ্বারা যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর সাইয়্যিদুনা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণের ইমাম ও সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের শেষ।
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اکبر ولا حول ولا قوة الا بالله العلی العظیم.
অর্থঃ আল্লাহ পাক পুতঃপবিত্র, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। আল্লাহ পাক ছাড়া কোন ইলাহ (মা’বূদ) নেই। আল্লাহ পাক মহান। কেউই ফিরে থাকতে পারে না ও কারো কোনই শক্তি নেই সুউচ্চ ও মহান আল্লাহ পাক-এর সহায়তা ও শক্তি ব্যতীত।

৫. কালিমায়ে রদ্দে কুফরঃ

اللهم انی اعوذبک من ان یشرک بک شیئا واستغفرک ما اعلم به ومالا اعلم به تبت عنه وتبرأت من الکفر والشرک والمعاصی کلها واسلمت وامنت واقول ان لا اله الا الله محمد رسول الله صلی الله علیه وسلم.
অর্থঃ আয় আল্লাহ পাক! আমি আপনার সাথে কোন কিছুর শরীক (অংশীদার) করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার কাছে জানা ও অজানা সমস্ত শিরকী গুনাহ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তা থেকে তওবা করছি। আমি কুফরী, শিরেকী ও সকল প্রকার গুণাহকে পরিত্যাগ করছি। আমি ইসলাম গ্রহন করছি। ঈমান গ্রহণ করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ পাক ছাড়া কোন ইলাহ (মা’বূদ) নেই, আর সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর রসূল।

*ঈমানে মুজমালঃ

امنت بالله کما هو باسمائه وصفاته وقبلت جمیع احکامه وارکانه.

অর্থঃ আমি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনলাম। যেমন, তিনি আসমা (নামসমূহ) ও ছিফতর (গুনাবলীসমূহ) দ্বারা প্রকাশিত ও বিদ্যমান। আর তাঁর যাবতীয় হুকুম-আহকাম (বিধানাবলী) মেনে নিলাম।

*ঈমানে মুফাচ্ছালঃ

امنت بالله وملئکته وکتبه ورسوله والیوم الاخر والقدر خیره وشره من الله تعالی والبعث بعد الموت.
অর্থঃ আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ পাক-এর প্রতি, তাঁর ফিরিশতা আলাইহিমুস সালামগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের প্রতি, শেষ দিবস (পরকাল)-এর প্রতি, তাক্বীদরের ভাল-মন্দের প্রতি যা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয় ও ইন্তিকালের পর পুনরুত্থানের প্রতি।

শনিবার, ২৫ মে, ২০১৩

কবি কাজী নজরুল ইসলামের অজানা প্রেম ও কালজয়ি দুটি গানের ইতিহাস।



কবি কাজি নজরুল ইসলামের প্রথম সাহিত্য কর্ম প্রকাশিত হয় ১৯১৯ সালে। সেই থেকে তিনি সাহিত্য ক্ষেত্রে তার অবদান রেখেছেন ১৯৪২ সাল পর্যন্ত। সে বছরই কবি অজ্ঞাত ও দূরারোগ্য ব্যাধিতে স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতা হারান। ফলে হিসেব করলে দেখা যায়, নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত সাধনা মাত্র ২৩ বছরের। অথচ এই ২৩ বছরেই তিনি আমাদেরকে সাহিত্যে ও সংগীতের বিপুল ঐশ্বর্য উপহার দিয়েছেন। অসুস্থ অবস্থায় কবি আরও ৩৪ বছর বেঁচে ছিলেন। অসুস্থ থাকা এই ৩৪ বছরে আরো কতো কিছুই না তিনি আমাদের দিতে পারতেন । তা হয়নি বলেই নজরুল আজ বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম এক বিস্ময় ।

আজ আমি কবি কাজি নজরুল ইসলামের এক অজানা প্রেমের কাহিনী বলব, যার কারনে সৃষ্টি হয়েছিল কালজয়ী দুটি গান । সেই দুটি গান রচনা করার ইতিহাস বলব। যা অতিব নাটকীয় ও চমকপ্রদ । আশা করি ঘটনাটি পাঠকদের সুখ পাঠ্য হবে।

কবি কাজি নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি । উনার সাহিত্য ও গানের বিশাল অংশ জুড়ে আছে প্রেমের কবিতা আর গান । কবির গান গুলো এত বৈচিত্রময় যে শুনতে এক ঘেয়েমি লাগে না । মনে হয় প্রতিটি গানের বাণী ও সুর যেন আলাদা আলাদা। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের প্রেমিক পুরুষ। তাই নারীর রুপ ও ব্যাক্তিত্ব তাকে আকৃষ্ট করত। তাইতো কবির জীবনে এসেছিল কয়েকজন নারী আসার খানম , ফজিলাতউন্নেসা , প্রমিলা । এরাই কবির জীবনের বিখ্যাত নারী। এর বাইরেও কিছু নারী কবির জীবনে এসেছিল ক্ষনিকের দখিনা হাওয়ার মত । আবার তারা সময়ে বারতায় হারিয়ে গেছে । তেমনই এক নারীকে নিয়ে আজ কবি কাজি নজরুল ইসলামের এক অজানা প্রেম কাহিনী।

কবি কাজি নজরুল ইসলাম রাজশাহী জেলায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন । এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহীতে এক নজরুল ভক্ত ব্যাকুল হয়ে গেলেন সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য । কারন প্রানের চেয়ে প্রিয়তম কবি নজরুলকে নিজ চোখে দেখে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া কে সার্থক করবেন।

ভক্তটি ছিলেন একজন তরুনী । শুধু তরুনী বললে কম বলা হয় তিনি ছিলেন যেমন সুন্দরী তেমন ব্যাক্তিত্ববান,ও শিক্ষিত । তিনি যেদিন খবর পেয়েছেন তার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাজশাহীতে আসবেন সেদিন থেকে তার অপেক্ষার প্রহর গুলি যেন হয়ে গেল দীর্ঘ ও অস্থিরময়। প্রতিটি ক্ষন যে আর ফুরাতে চায় না । কবে তার প্রিয় কবিকে দুই চোখ ভরে দেখবেন ? কারন এতদিন কবিকে তার গল্প কবিতা, গানের মাঝে ও পত্রিকায় দেখেছেন । বাস্তবে দুই চোখ ভরে দেখা হয়নি ।

তরুনী নির্দিষ্ট দিনে পদ্মার ঘাটে দাড়িয়ে থাকা স্টিমারে উঠলেন রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে । পদ্মার পাক খাওয়া ঢেউয়ের ঘোলা জল কেটে এগিয়ে চলছে ষ্টিমার। তরুনি ষ্টিমারের রেলিংএ ঘেষে দাড়ি্যে আছেন । পদ্মার মাতাল বাতাসে তার দীঘল কালো চুল বেধে রাখা যাছ্ছে না । বার বার শাড়ির আচলের বাধন ছেড়ে নদীর মাতাল বাতাসের সাথে উড়ে যেতে চাইছে। তরুনী দুই হাতে অবাধ্য চুল গুলোকে বাধছেন আর ভাবছেন কিভাবে তার প্রিয় কবির সাথে দেখা করবে । দেখা হলে সে কি বলে কবিকে সম্ভাষন করবে। কবি কি তার সাথে কথা বলবে । এই ভাবনার মাঝেই, হঠাৎ মেয়েলি অনুভূতিতে বুঝতে পারল, কে যেন তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মধুর ভাবনায় ছন্দ-পতন হল। মাথা ঘুরিয়েই তাকাতেই দেখতে পেল এক তরুন ভাবালু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে । সুঠাম দেহ তার। বড় বড় দুই চোখে যেন রাজ্যর কাব্য ভেসে বেড়াছ্ছে । প্রশস্ত কাধের উপর ছড়ানো চুল তার পদ্মার বাতাসে উড়ছে । তরুনী নিজেকে সামলে নিল । যুবকটির অসভ্যতায় বিরক্ত বোধ করতে লাগল । তরুনী ঐ জায়গা থেকে সরে অন্য দিকে চলে গেলেন । সেখানে বসে আবার তার প্রিয় কবির ভাবনায় বিভোর হয়ে গেল । কবির সাথে দেখা হওয়ার আনন্দে সারা মন শিহরীত হয়ে আছে। এই সময় আবার যুবকটিকে দেখলেন । এবারও সে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তরুনী এবার আর সরে গেল না । সাহস করে সোজা যুবকের দিকে এগিয়ে গেল । সরাসরি যুবকের সামনে এসে দাড়াল । তারপর যুবকের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেনঃ আপনি এমন করছেন কেন ? মেয়ে মানুষ কখনও দেখেননি ? লজ্জা করে না এভাবে পথে ঘাটে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ?

যুবক কিছুই বললেন না । তরুনীর কথায় তার মোহনীয় মুখখানা পদ্মার নদীর পানির কালো রং ধারন করল। তারপর ধীর পায়ে তরুনির কাছ থেকে দুরে সরে গেল। এরপর আর সামনেও এল না তরুনীও সাছ্ছন্দ বোধ করল।

তরুনী যথা সময়ে অনুষ্ঠানে পৌছলেন। প্রিয় কবিকে দেখার জন্য সে সভার একেবারে সামনের দিকে বসলেন। কিছুক্ষন পর অনুষ্ঠান শুরু হল । অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ একজন একজন করে মন্চে উঠতে লাগল । এই সময় একটু হালকা শোরগোল শোনা গেল । দর্শকরা দেখতে পেল তাদের প্রিয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম বন্ধু পরিবেষ্টিত হয়ে মন্চে উঠে আসলেন। দর্শক সবাই দেখতে পেল সুঠাম দেহের অধিকারী , কাধ ছোয়া বাবড়ি চুল , বড় বড় টানা টানা দুই চোখ , সারা মুখ জুড়ে নিষ্পাপ হাসি মাখা কবি কাজি নজরুল ইসলাম তার নির্দিষ্ট আসনে বসলেন। আর তরুনী দেখতে পেল তার কবি কাজি নজরুল ইসলাম আর কেউ নয় পদ্মা নদীতে ঢেউ কেটে চলা সেই ইষ্টিমারের তার সহযাত্রী। যাকে সে অপমান করেছিল তার দিকে তাকিয়ে ছিল বলে।

নজরুল মন্চে বসে সরাসরি তরুনীর দিকে তাকালেন । চোখাচোখি হল দুজনের । চোখাচোখি হল কবি ও তার অচেনা ভক্তের । কবি নজরুলের চোখে চোখ পড়তেই তরুনী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। হায় হায় একি করেছে সে । যাকে সারা জীবন পুজা করেছে প্রিয় কবির বেদিতে রেখে, তার সাথে সে না জেনে না বুঝে একি আচরন করল ।

এই সময় মন্চ থেকে ভেসে এল উপাস্থপকের ঘোষনা এখন সংগীত পরিবেশন করবেন আমাদের প্রিয় কবি কাজি নজরুল ইসালাম।

বেজে উঠল হারমোনিয়াম আর তবলার সম্মিলীত আওয়াজ । তার কিছু পড়েই যোগ হল কবির ভরাট কন্ঠের গান। সম্পূর্ন নতুন গান ।

কবির সব গান তরুনী কন্ঠস্থ, কিন্তু এই গান সম্পূর্ন নতুন যা আগে কখনও সে শুনেনি । তার মানে কবি এখনই এই গান খানা রচনা করেছেন । যা কবি কাজি নজরুল ইসলামের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার।

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ ।

চাদেরে হেরিয়া কাদে চকোরীনি ,

বলে নাত কিছু চাদ।

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ ।

চেয়ে চেয়ে দেখি ফোটে যবে ফুল ,

ফুল বলে নাত সে আমার ভুল।......


তরুনী বুঝতে পারল গান খানা তাকে নিয়ে কবি রচনা করেছেন । অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখতে পেলেন, কবি তার দিকে তাকিয়েই গান গেয়ে যাছ্ছেন । কবির আশে পাশে তার বন্ধুরাও তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। এত সুন্দর গান শুনেও তরুনীর মনে হল হে ধরণী দ্বিধা হলে ভাল হত।

তরুনী এরপর ওভাবেই মাথা নিচু করে পুরো অনুষ্ঠানটা শেষ করল । অনুষ্ঠান শেষে, আর কিসের কবির সাথে দেখা করা আর কথা বলা , এখন পালাতে পারলেই সে যেন বেচে যায় ।

ইষ্টিমারে ফিরতি পথে রওয়ানা দিল তরুনী। মনের মাঝে চলছে উথাল পাথাল আত্ম সমালোচনার ঢেউ । যার জন্য এত কিছু । যার সান্নিধ্য কিছু সময় কাটানোর জন্য কত প্রহর আর ক্ষন বিনিদ্র রজনী কেটেছে । তার সাথে প্রথম দেখায় সে একি আচরন করল। সেত পত্রিকায় কবির ছবিও দেখেছিল তারপরও কেন চিনতে পারল না ।কবির সাথে নিজকৃত আচরনের জন্য তরুনী কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। অনুতপ্ত হৃদয়খানি তার বার বার এর প্রায়শচিত্ত করার জন্য তাগাদা দিছ্ছে ।এই ঘটনায় তরুনী তার নিজের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলল । এক পর্যা্যে সে নিজের জীবন নিয়ে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল । তাকাল পদ্মা নদী পাক খাওয়া ঘোলা পানির দিকে । পৃথিবীর এই জমিনে যেন তার থাকার এতটুকু জায়গা নাই । পদ্মা নদীর বুকেই যেন সব শান্তি । নদীর অশান্ত জল যেন তার সকল গ্লানি মুছে দিয়ে তাকে দিবে চির শান্তির আস্বাদন।

কবি কাজি নজরুল রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় শুনতে পেলেন তার অচেনা সেই তরুনী ভক্তের পদ্মা নদীতে আত্মহত্যা করার করুন কাহিনী । সেই তরুনী ভক্তের মৃত্যুতে তার কবি হৃদয়ে হাহাকার করে উঠল।

জন্ম নিল আরেকটি কালজয়ি গান।

পদ্মার ঢেউরে __________এ ।

মোর শুণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে ,

পদ্মার ঢেউরে ,

এই পথও ছিলরে যার রাংগা পায়,

আমি হারায়েছি তারে,

আমি হারায়েছি তারে,

পদ্মার ঢেউরে __________এ ।

মোর শুণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে ,

পদ্মার ঢেউরে ,


( ঘটনাটি আমি গত কয়েক বছর আগে এফ এম রেডিওতে নজরুল জন্ম বার্ষিকি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে ঘটনাটি শুনেছিলাম । )

ধার্মিকদের প্রতি নজরুল: 'আগে বাঙলা শিখুন!'

ধার্মিকদের প্রতি নজরুল: 'আগে বাঙলা শিখুন!'

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫ |

শেয়ারঃ
0 0

বাঙলাদেশের আলিম সমাজে নানা বিষয়ে বহু পণ্ডিত ব্যক্তি আছেন। কেউ ফিকহ শাস্ত্রে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন, কেউ তাফসীর শাস্ত্রে অসাধারণ প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রেখেছেন, কেউ হাদীস শাস্ত্রে স্মরণীয় খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে গিয়েছেন, কেউ বা আবার আরবী-বাঙলা, বাঙলা-আরবী ও উর্দু-বাঙলা অভিধান রচনার মতো কঠিন কাজে সফল হয়ে বিরল সম্মানের অধিকারী হয়েছেন – কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে কীর্তিমানদের মধ্যে আজকাল একজন আলিমও খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা বড় বেশি আকাবিরভক্ত, কিন্তু তাঁদেরকে আমরা অনুসরণ করতে পারি নি, পারছি না। ভারত ও পাকিস্তান দু দেশেরই স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন আলিমগণ। উর্দু সাহিত্যের অধিকাংশ লেখকই আলিম। ওই দু দেশের জাতীয় সংস্কৃতিতে আলিমদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বাঙলাদেশে ঘটেছে ঠিক এর উলটোটি। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামে আলিমরা যেমন নেতৃত্ব দিতে পারেন নি, তেমনি জাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে মুখ্য স্থান দখল করতে পারেন নি। নতুনদের মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও তা খুবই ক্ষীণ। মাদরাসার পাঠ্যসূচি এখনো মূলত বিভাষী, এমনকী শিক্ষার উচ্চস্তরেও বাঙলা শেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। জাতির মেধা ও মননকে প্রভাবিত করতে না পারলে মিছিল করে লাভ কী? দফা দিয়ে কি কোথাও ইসলাম-প্রতিষ্ঠা হয়েছে?

কাজী নজরুল ইসলাম এ বিষয়টি গভীর বেদনার সঙ্গে উপলব্ধি করেছিলেন। ধর্মীয় ভাষা হিসেবে আরবী ও অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখার গুরুত্ব তিনি স্বীকার করতেন, তবে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় মাতৃভাষায় দক্ষতা ছাড়া সমস্ত পাণ্ডিত্যই যে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে, তা-ও স্পষ্ট করে বলতেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অ্যাডুকেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির অভিভাষণে নজরুল এই কথাটাই বড় জোর দিয়ে বলেছিলেন। বলেছিলেন:

"“কোনো মুসলমান যদি তার ইতিহাস ধর্মশাস্ত্র কোনো কিছু জানতে চায়, তাহলে তাকে আরবি-ফার্সি বা উর্দুর দেওয়াল টপকাবার জন্য আগে ভাল করে কসরৎ শিখতে হবে। ইংরেজি ভাষায় ইসলামের ফিরিঙ্গি রূপ দেখতে হবে। কিন্তু সাধারণ মুসলমান বাঙলাও ভাল করে শেখে না, তার আবার আরবি-ফার্সি; কাজেই ন’ মণ তেলও আসে না, রাধাও নাচে না।”"

বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

কাবা ও মসজিদে হারাম সংক্রান্ত কিছু তথ্য।

কাবা ও মসজিদে হারাম সংক্রান্ত কিছু তথ্য।

ক্ষেত্রফল; ৩,৫৬,০০০বর্গ মিটার।
মুসুল্লি ধারন ক্ষমতা স্বাভাবিক সময়ে;
৭,৭৩,০০০, হজ্ব, উমরাহ বা রমজানের
মওসুমে যা ১মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।

ভুমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা প্রায়
২,৫মিটার, দরজার দৈর্ঘ্য ৩,০৬মিটার, প্রস্থ ১,৬৮মিটার।

বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের
হাদিয়া (উপহার) দেয়া, যা নির্মানে প্রায়
২৮০কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে।

হারামে ইমামের সংখ্যা; ১৫জন।
হারামে মুয়াজ্জিন সংখ্যা; ১৭জন।
প্রধান মুয়াজ্জিন আব্দুল মালিক বিন আব্দুর রহমান।

* কাবা নির্মাতা; ফেরেশতা, আদম, শিস,
ইব্রাহিম, ইসমাইল, আমালিকা, জুরহম, কুরাইশ,
আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ,
সুলতান মুরাদখান, ফাহদ।

* প্রথম কাবা তাওয়াফকারী; ফেরেশতারা।

* প্রথম হারামে হজ্ব আদায়কারী; ফেরেশতারা।

* প্রথম কাবার ছাঁদ নির্মাতা; কুসাই বিন
কিলাব।

* প্রথম কাবাকে আংশিক গিলাফ পড়িয়েছেন;
ইসমাইল।

* সর্বপ্রথম সম্পুর্ণ কাবাকে গিলাফ পড়িয়েছেন; তুব্বা আসআদ আল হিমরারী।

* সর্বপ্রথম কাবাতে মুর্তি স্থাপন করেছেন;
আমর বিন লুহাই আল খুজাঈ।

* সর্বপ্রথম কাবার মিনার বানিয়েছেন;
কুরাইশ।

* সর্বপ্রথম কাবাকে গোসল দিয়েছেন; রাসূলুল্লাহ (সাঃ), মক্কা বিজয়ের দিন
কাবা থেকে মুর্তিগুলো নিস্কাশনের পর।

* কাবাপৃষ্টে সর্বপ্রথম উচ্চস্বরে আযান
দিয়েছেন; বেলাল বিন রাবাহ।

* সর্বপ্রথম কাবাকে মিনজানিক
দিয়ে হামলা করেছেন; আল হুসাইন বিন নুমাইর, ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার নির্দেশে ইবনু
যুবায়েরের সাথে যুব্ধের প্রাক্কালে (৬৪
হিজরী)।

* ১০৩৯ হিজরী বন্যার ফলে কাবার একটি অংশ
ধসে যায়।

* পৃ্থিবীর সর্বোতম ছায়া কাবার ছায়া।

কথা বলার কোরআনী আদবঃ

কথা বলার কোরআনী আদবঃ

১. সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে (সূরা নং-৩ আয়াত-৭)
২. স্পষ্টভাষী হতে হবে (৩৩/৭০)
৩. ন্যায় কথা বলতে হবে (৬/১৫২)
৪. দয়াদ্রভাবে কথা বলতে হবে (২/৮৩)
৫. নম্র ভাষায় কথা বলতে হবে (১৭/৫৩)
৬. যুক্তিসংগত কথা বলতে হবে (১৭/২৮)
৭. ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে (২০/৪৪)
৮. সুসভ্যভাবে কথা বলতে হবে (১৭/২৩)
৯. অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকতে হবে (২৩/৩)
১০. মিথ্যা কথা বর্জন করতে হবে (২২/৩০)
১১. পশ্চাতে কথা বলা (গীবত) পরিহার করতে হবে (৪৯/১২)
১২. প্রমাণবিহীন কোন কথা বলা যাবে না (২/১১১)
১৩. গালি-গালাজ করা যাবে না (৩৩/৫৮)

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

অনেকদিন আগের একটি ঘটনা যা আমাকে এখনও শিহরিত করে।


আফজাল হোসেন এক স্বনাম ধন্য টিভি অভিনেতা । যিনি নিজ যোগ্যতা গুনে অভিনয় শৈলী দিয়ে জয় করে নিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়। একদিন এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে উনাকে প্রশ্ন করা হলঃ আপনার জীবনে কোন ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি বিষাদময় ?
তিনি বলললেনঃ আমার পিতার মৃত্যু ।
উপস্থাপকঃ পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের কাছেই তার পিতা -মাতার মৃত্যু বিষাদময় । এ ছাড়া আর অন্য .....।
অভিনেতাঃ হ্যা আপনার কথা ঠিক কিন্তু আমার পিতার মৃত্যু আমার কাছে বিষাদময় অন্য কারনে।
ঃ দর্শকদের কি বলবেন তাহলে কি কারনে আপনার পিতার মৃত্যুটা আপনার কাছে এতটা বিষাদময় ?
ঃ আমার পিতা ছিলেন খুবই শৌখিন ও আভিজাত্য মেজাজের মানুষ । তিনি সবসময় পরিষ্কার পরিছ্ছন্ন পরিপাটি চলতে পছন্দ করতেন। উনার বিছানা , কাপড়-চোপড় , জুতা ও অন্যান্য ব্যাবহার্য জিনিস পত্র সব সময় সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার থাকত। উনার পড়নের কাপড় থাকত খুবই পরিষ্কার এবং কড়া ইস্ত্রি ভাজ দেওয়া । আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে উনাকে কখনও এর ব্যাতিক্রম দেখিনি । উনাকে যখনই দেখতাম তখনই মনে হত যেন এই মাত্র উনি আলমারী থেকে বের করে পড়নের কাপড় পড়েছেন। সেই আমার বাবা যেদিন মারা যায় সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হছ্ছিল । এই বৃষ্টির মধ্যেই বাবার জানাজা হল । জানাজার পরে লাশ নিয়ে আমরা গোরস্থানে গেলাম। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে বাবার লাশ কবরে নামানো হল। সাদা কাফনের কাপড়ে জড়ানো আমার বাবাকে যখন কবরে নামানো হল, তখন বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া কর্দমাক্ত কবরের কাদামাটি লেগে আমার বাবার কাফনের কাপড়টা মাটি আর ময়লা পানিতে মাখামাখি হয়ে গেল। মৃত লাশ হয়ে থাকা আমার বাবা যিনি জীবিত অবস্থায় কোনদিনও কাপড়ে একটু বালি লাগতে দেননি তিনিই আজ কাদা মাখা কাফনের কাপড় পড়ে কবরে শুয়ে পড়ছেন। এই শোয়া চিরকালের চিরদিনের ।

বিঃদ্রঃ- অভিনেতা আফজাল হোসেনের উপরোক্ত সাক্ষাৎকারটি অনেক দিন আগে বিটিভিতে দেখিয়েছিল। তখন সাক্ষাৎকারে বলা অনেক কথাই হুবহু মনে নাই। তাই অভিনেতা আফজাল হোসেনের মুল বক্তব্যর ঘটনা ঠিক রেখে নিজের মত করে বল্গে লিখেছি ।

সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

চুড়েল (ভৌতিক গল্প)


তখন আমি সিলেট বিভাগের জেলা ছাতকের খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকতা। আমাদের অফিসটা ছিল সুরমা নদী কোল ঘেষে। গাছগাছালী ঘেরা ছায়া মনোরম এক পরিবেশ । আমার অফিস থেকে একটু হেটে কিছুদুর গেলেই সুরমা নদীর পাড়ে ঘেষে একটা শশ্মান। ঐ শশ্মানে একটা মানুষ প্রমান কালীর মূর্তি ছিল । কালীর মূর্তিটার সারা শরীর ছিল কালো রংয়ের ছিল । পরনেও ছিল কালো রংয়ের একটা শাড়ি। পিছনে কালো এলোমেলো চুল গুলো নিতম্ব ছেড়ে নিচে নেমেছে। এক হাতে ত্রিশুল, আরেক হাতে একটা সাপ । মুখ থেকে অনেকটা বেরিয়ে থাকা লাল রংয়ের জিব্হাটা মুখ থেকে ভয়ংকর ভাবে বের হয়ে বুক ছুয়েছে। চোখ দুটি টকটকে লাল। ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ দেখলে চমকে উঠতে হয়। দিনের বেলা মুর্তিটাকে দেখলে তেমন একটা ভয় লাগত না, কিন্তু সন্ধ্যা বেলা পড়ন্ত সূর্যের আলোয় দেখলে বুকের ভিতর অজানা এক ভয়ের শিহরন জাগত। তখন মনে হত ওটা মুর্তি নয়, সত্যি জীবন্ত ভয়ংকর এক মানবী । আমি শিহরীত হওয়ার জন্য প্রায় সন্ধ্যা বেলায় যেতাম। আমার এভাবে ওই সময় প্রায় যেতে দেখে অফিসের দাড়োয়ান একদিন বললঃ স্যার শশ্মান জায়গাটা তেমন ভাল না আপনি সন্ধ্যার সময় ওদিকটা না গেলেই ভাল হয়।
আমি দাড়োয়ানের কথা শুনে মনে মনে হাসলাম। এই পৃথিবীতে যা নাই তা নিয়ে কেউ ভয় পেলে যে কোন বুদ্ধিমান লোক হাসতে বাধ্য । কিন্তু দাড়োয়ান বয়ষ্ক মানুষ আমাকে হাসতে দেখে মনে কষ্ট পেতে পারে তাই মনে মনেই হাসতে হল। আমি ওকে প্রশ্ন করলাম ঃ কেন ওখানে তেমন কিছু হয়েছে নাকি ?
আমার কথা শুনে দাড়োয়ান দুই চোখ বড় বড় করে বললঃ স্যার এই গত কয়েকদিন আগের ঘটনা এক পরিবার নতুন বউ নিয়ে সুরমা নদীর পাড় দিয়ে কোথায় যেন যাছ্ছিল । আছরের না'মাযের পর এসেছিল। ঘরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ফেরার সময় শশ্মানটা যখন পাড় হছ্ছিল তখনই শান্ত লাজুক বৌটা হঠাৎ দৌড়ে শশ্মানের ভিতর ঢুকে গেল। পরিবারের লোকেরা কিছু বুঝে উঠার আগেই বউটি দৌড়ে কালীর মূর্তির কাছে যেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলঃ দে আমায় ফিরিয়ে দে।
স্যার বিশ্বাস করবেন না তখন কিযে এক অবস্থা। শেষে আমি যেয়ে দোয়া পড়ে ফু দেওয়ার পর বৌটি বেহুশ হয়ে কালী মূর্তির পায়ের কাছে পড়ে গেল। তখন আমি পরিবারের লোকদের বললাম নিয়ে যেতে।
আমি ঘটনা শুনে কোন মন্তব্য করলাম না । করে কি হবে । ওরা শত শত বছর ধরে যে বিশ্বাস বংশ পরষ্পরায় বুকে ধারন করে চলছে তা আমি এক লহমায় ওদের অন্তর থেকেত মুছে দিতে পারব না। তাই চুপ করে থাকলাম। আমার চুপ করে থাকাকে দাড়োয়ান কি বুঝল জানিনা । হয়ত সে ভেবেছে আমি তার কথা বিশ্বাস করেছি কিংবা ভয় পেয়েছি । সে এবার বললঃ স্যার এখানে এসেছেন একটু সাবধানে চলা ফেরা করবেন ।
আমি ওর কথা শুনে কৌতুহলী হয়ে উঠলামঃ কেন ? সাবধানে চলাফেরা করতে হবে কেন ? এখানে কি দিন দুপুরে ছিনতাই ডাকাতি হয় নাকি ?
ঃ না স্যার তার চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা ঘটে।
ঃ কেমন ?
ঃ তাহলে শুনুন ।
দাড়োয়ান এক কদম এগিয়ে আমার কানের কাছে তার মুখটা নামিয়ে ( আমি চেয়ারে বসা ছিলাম । ও দাড়ানো ছিল।) বললঃ স্যার এখান থেকে শ দুইশ গজ সামনে গেলেই বাম দিকে একটা মাটির রাস্তা গেছে । রাস্তাটা এখন কেউ ব্যাবহার করে না তাই ঘাসে ছেযে গেছে । রাস্তাটা ধরে কিছুদুর গেলেই দেখবেন বিশাল এক জমিদার টাইপের বাড়ি।
ঃ জমিদার বাড়ি না হয়ে জমিদার টাইপের বাড়ি কেন ?
ঃ কারন বাড়িটা কোন জমিদার তৈরী করেনি । এক লন্ডনী ধনী ব্যাক্তি তৈরী করেছে । ঐ জায়গাটা আগে একটা দীঘি ছিল। প্রায় দশ বিঘা জায়গার উপর। ঐ লোক দশ বিঘার মধ্য দুই বিঘা ভরাট করেছে বাড়ি করেছে । আর আট বিঘা দীঘি হিসেবে রেখে দিয়েছে। বাড়িটা খুব সুন্দর জমিদারী নকশায় এরকম বাড়ি আমাদের সিলেটে আর কোথাও নাই। এই এত সুন্দর বাড়িতে কিন্তু কেউ থাকে না । সম্পূর্ন নির্জন বাড়িটা ওভাবেই খালি পড়ে আছে আজ অনেক বছর।
ঃ কারন কি ? খালি পড়ে আছে কেন ?
ঃ তা জানিনা, তবে শুনি অনেক কথা ।
আমি বুঝতে পারলাম ব্যাটা দাড়োয়ান এখনি আজব আজব গল্প শুরু করে দিবে । তাই তাড়াতাড়ি তাকে কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
এরপর বেশ কদিন খুব ব্যাস্ততায় কাটল প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে । সরকারি কাবিখা প্রকল্পের কিছু গম এসেছিল ওগুলো বুঝে নেওয়া আবার স্থানিয় নেতাদের মাঝে বিলি করা এই সবে কেটে গেল কয়েকটা দিন। ব্যাস্ততা কেটে যাওয়ার পর দিন আবার আগের মত । বিকালের পর প্রতিদিন অবসর । একদিন বিকালে অফিসের হিসাব-কিতাব মিলিয়ে অনেকটা অবসর পেয়ে গেলাম । অফিস থেকে বের হয়ে সুরমা নদীর পার ধরে হাটতে লাগলাম । রোদ আছে তবে তার আলোটা তেমন তির্যক না । যেটুকু তাপ আছে সুরমার স্রোত ভেজা বাতাসে তা অনেকটা হিমেল হয়ে আছে। আমি অলস পায়ে হাটতে হাটতে শশ্মান পার হয়ে অনেকটা সামনে এগিয়ে গেলাম । এদিকটা অনেকটা নির্জন সুরমা নদী এখানে অনেকটা দুরে। আমি আস্তে আস্তে হাটছি আর দুপাশে তাকাছ্ছি । এই সময় দেখতে পেলাম জমিদার বাড়িটা । ভেংগে চুড়ে যাওয়া লোহার গেটটা দিয়ে ভিতরে পুরাটাই দেখা যাছ্ছে ।বিশাল ঘেরাওয়ের মাঝে বাড়িটা । জমকালো দোতলা বাড়ি। সামনে বাগান । যদিও ওখানে এখন বুনো দুই একটা ফুল গাছ ছাড়া আর কোন গাছ নাই। বাগানটার পরেই বাড়িটার সামনে আনেক উচু উচু দেবদাড়ু গাছ । সুরমা নদী বেয়ে আসা বাতাসে দুলছে । এত সুন্দর বাড়িটা বাইরে থেকে দেখে ভিতরে যাওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারলামমনা । আমি আস্তে আস্তে গেট পেরিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। বাড়িটার সামনে বিশাল লম্বা বারান্দা । বারান্দার পরে সেগুন গাছের তিনটা দরজা । দুই পাশের দুটি দরজা মাঝখানের দরজাটির চেয়ে ছোট । মাঝখানের দরজাটি প্রায় দশ ফুট উচু । দরজা তিনটিতেই প্রচুর নকশা কাটা । ঝড়-বাদলে দরজার রং গুলো কিছুটা ম্লান হলেও দেখতে বুঝা যায় দরজা গুলো এখনো মঝবুত। বিশাল বিশাল আটটা জানালা । এগুলো বন্ধ। দোতালায়ও বারান্দা আছে সেখানে কাঠের নকশাদার রেলিং। রেলিং গুলো কালো রঙের বোঝাই যায় ওগুলো গর্জন গাছের। এগুলো ও শক্ত । বাড়ির ছাদটা টিনের চালের লাল রঙের সিরামিক ইটের টালী দিয়ে ছাওয়া । ইটের লাল রঙের জৌলুসটা নাই । আমি একমনে দেখছি আর ভাবছি কি সুন্দর বাড়িটা । একটু বায়ে ঘুরে সামনে এগিয়ে যেতেই বুকের ভিতর হৃৎপিন্ডটা লাফ দিয়ে উঠল । নারী কন্ঠে কে যেন কথা বলল ? পিছনে ফিরতেই দেখি বরফ সাদা রঙের শাড়ি পড়া বেশ লম্বা, হালকা পাতলা গড়নের অপূর্ব সুন্দরী এক তরুনী । আমি অনেকটা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম । তরুনী আমাকে প্রশ্ন করলঃ কাকে চাছ্ছেন ?
আমি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলাম ।
ঃ কাউকে না হাটতে হাটতে এই সুন্দর নির্জন বাড়িটা চোখে পড়ল তাই একটু দেখছি।
তরুনীটি ফিক করে হেসে ফেললঃ এই পুরাতন বাড়িতে দেখার কি আছে ? আপনি যেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখছেন । আমি অনেকক্ষন হয় এসেছি আপনার তন্ময়তা ডাকিনি ।
ঃ আপনি ?
ঃ আমি ? আমি এই বাড়িতে থাকি।
আমি অবাক হয়ে গেলামঃ আমি যতটুকু শুনেছি , এই বাড়িতে কেউ থাকে না ...............।
ঃ আপনি ঠিকই শুনেছেন । আমি লন্ডন থেকে গতকাল এসেছি । বাড়িটা বিক্রির ব্যাপারে। আপনি ?
ঃ আমি আপনাদের স্থানিয় কেউ না ..........।
ঃ সে আপনার ভাষার উচ্চারন শুনেই বুঝেছি । তা কিভাবে আমাদের এখানে এলেন ?
ঃ আমি বাংলাদেশ খাদ্য মন্ত্রনালয়ে চাকরী করি । বেশ কিছু দিন হল ওসি এল এসডি হিসেবে পোষ্টিং হয়ে এসেছি।
ঃ ও। চলুন যাওয়া যাক ।
ঃ কোথায় ?
ঃ বাহ! বাড়ির সামনেরটাই দেখবেন পিছনটা দেখবেন না ?
ঃ পিছনটাও দেখা যাবে নাকি । তাহলেত ভালই হয় ।
তরুনী সামনে চলতে লাগল , আমি পিছন পিছন যাছ্ছি । সাদা শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে । চিকন কোমরের নিচে শাড়ির আচল বাতাসে উঠছে আর নামছে। তরুনী শাড়িটি এমন ভাবে পড়েছে পা এতটুকুও দেখা যাছ্ছে না। বাড়ীর পিছন দিকে এসেত আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম। বিশাল এক দীঘি । টলটলে সছ্ছ তার পানি । পাড়ের চারদিকে বড় বড় অনেক উচু নারকেল গাছ দুই একটা তাল গাছও আছে। দীঘির পাড়ে শান বাধানো একটি বড়সড় এক ঘাট । ঘাটের গেটে মানুষ সমান প্রায় উলংগ দুটি নারী মূর্তি । ঘাটে বসার ব্যাবস্থা আছে।
ঃ চলুন আগে কিছুক্ষণ ঘাটে বসি । এখানে দীঘির হিমেল বাতাসে গায়ের ঘাম শুকিয়ে নেই তারপর ভিতরে যাব ।
আমি মনে মনে তাই চাইছিলাম তাই কোন বাক্য ব্যায় না করে , ঘাটের আসনে বসে গেলাম। তরুনী পাশে এসে বসল। আমার তরুনীটির আচরনে প্রথম প্রথম খটকা লাগলেও পড়ে নিজের মনে একটা ব্যাখ্যা দাড় করলাম। কারন আমাদের দেশে মেয়েরা এতটা অগ্রসর এখনও হয়নি । প্রথম দেখাতেই যে ভাবে সে আমাকে নিসংকোচে এতটা কাছে আসার সুযোগ দিয়েছে, ভাবতেই অবাক লাগে । এটা সম্ভব একমাত্র ইউরোপ আমেরিকার মত পরিবেশে কেউ দীর্ঘ দিন থাকলে বা সেখানে জন্মালে ।
ঃ কি ভাবছেন । আমাকে নিয়ে ভাবছেন নাত ?
আমি চমকে উঠলাম । আমার চমকে উঠা দেখে মেয়েটি চুড়ি ভাংগা রিনঝিন শব্দে হেসে উঠল ।
ঃ কি ? আমি ঠিক বলেছি তাইনা ।
আমি অস্বিকার করতে পারলাম না । তাই মাথাটা উপর নিচ করে স্বিকার করলাম ।
তরুনী কপট রাগে বললঃ কাজটা ঠিক করেননি । কারণ আমাকে নিয়ে যারাই ভাবে তারা ডুবে মরে ।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ বুজলাম না।
ঃ মানে আমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ডুবে মরে ।
এই বলে মেয়েটি আবার হাসতে লাগল ।
নির্জন এই দীঘির পাড়ে মেয়েটির হাসিতে আমি যেন কিসের অশুভ ছায়া দেখতে পেলাম ।
হাসি থামিয়ে মেয়েটি দীঘির সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললঃ আসুন মুখ হাত ধুয়ে নিন তারপর বাড়ির ভিতরটা দেখাতে নিয়ে যাব ।
আমি সিড়ি দিয়ে নেমে পায়ের গোড়ালী ডোবা পানিতে দাড়ালাম । নিচে পানিতে ডোবা পায়ের দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম তরুনীটির শাড়ি পানিতে ভেসে উপরে উঠে গেছে, ওর পায়ের পাতা দেখা যাছ্ছে । ওর পা দেখে ভয়ে চমকে উঠলাম । তরুনীটির পায়ের গোড়ালী দেহের সামনের দিকে পায়ের আংগুল দেহের পিছন দিকে । আমার চমকে উঠা দেখেই তরুনী বুজে ফেলল আমি ওর পায়ের গঠনটা দেখে ফেলেছি । তখন সাথে সাথে আমাকে জাপটে ধরল । আমি দেখতে পেলাম ওর দু চোখ আগুনে জ্বলা গনগনে কয়লার মত লাল হয়ে গেছে। তিক্ষ্ন কন্ঠে অপার্থিব এক চিৎকার করে আমাকে নিয়ে দীঘির জলে ঝাপিয়ে পড়ল। পানিতে ডুবে যাওয়ার শেষ মূহূর্তে দেখতে পেলাম কে যেন ঘাটে এসে দাড়িয়েছে।
প্রায় তিনদিন পর আমার হূশ এল । দেখতে পেলাম আমি একটি মাটির ঘরে শুয়ে আছি । আমি চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম দাড়োয়ানকে । ওকে দেখে উঠতে চাইলেই ও আমাকে জোর করে শুইয়ে দিল । আবার আমি ঘুমিয়ে গেলাম । তারপর দিন সকালে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলাম। আমি এবার আর নিজের কৌতুহোল ধরে রাখতে পারলামনা।
দাড়োয়ান বললঃ আপনি চুড়েল এর পাল্লায় পড়েছিলেন । চুড়েল এক নারী প্রেত আত্মা । এরা গভীর জংগল নদী ও অব্যাহৃত দীঘিতে থাকে। এরা বেশির ভাগ সময় উলংগ নারীর বেশে যুবক পুরুষদের আকৃষ্ট করে । এরা খুবই নিষ্ঠুর আর পিশাচ । এরা যুবক পুরুষদের খুব নৃশংস ভাবে হত্যা করে । আপনার আগেও অনেক যুবক ওই দীঘির পানিতে ডুবে মারা গেছে। কিন্তু আমরা এলাকার কেউ জানতে পারিনি কিভাবে মারা গেছে এখন আপনার ঘটনায় ব্যাপারটা জানা গেল। আপনাকে ওইদিন থেকেই খেয়াল রাখছিলাম বলে বেচে গেছেন ।
আমার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল বিখ্যাত শিকারী জিম করবেটও একবার শিকার করার সময় জংগলে চুড়েল দেখেছিলেন ।

কিশোর কিশোরীদের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন নয় কি ?

আমি কিছুটা স্বাস্থ্য সচেতন তাই প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম করি । সারাদিন কাজের ব্যাস্ত্যতায় সময় হয় না ,তাই মাগরিবের নামাযের পর সন্ধ্যায় বের হই । আমার দোকানের কিছু দুরেই জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ । মসজিদের সামনে বিশাল মাঠ । মাঠে নামার আগে আমি প্রথমে হালকা ব্যায়াম করে নেই । তারপর দৌড়ও নয় হাটাও নয় এই ভাবে একটানা এক মাইল ( আমি আন্দাজ করে ১৭৬০ গজ মেপে এক মাইল জায়গা নির্দিষ্ট করে নিয়েছি ।) হাটাদৌড় দেই । প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ব্যায়ামটা করার চেষ্টা করি। এতে আমার শরীর দারুন ফিট থাকে। নিজেকে সব সময় মনে প্রানবন্ত ও উছ্ছল। এইভাবে প্রতিদিন ব্যায়াম করি।
একদিন মাগরিবের নামায পড়ে হালকা ব্যায়াম করতে এসে মাঠের দিকে তাকিয়েই মেজাজটা বিগড়ে গেল। আমার হাটাদৌড়ের নির্দিষ্ট জায়গার মধ্য কারা যেন স্তুপ করে কি যেন ফেলে রেখেছে । সন্ধ্যার আলো-আধারীতে দুর থেকে স্তুপ করা জিনিসগুলো ভাল মত দেখা যাছ্ছে না । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলেও কিছু করার নেই ব্যায়ামতো করতেই হবে । তবে আজ নির্দিষ্টি পথে যাওয়া যাবে না । একটু ঘুর পথে যেতে হবে । যাই হোক প্রথমে হালকা ব্যায়াম সেরে নিলাম তারপর হাটাদৌড় শুরু করলাম । হাটাদৌড় দিয়ে স্তুপ আকৃতি জিনিসটার দিকেই আসতে যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কগাছে উঠার উপক্রম। একি দেখছি এত কোন স্তুপ আকৃতি কোন জিনিস না। দুর থেকে যা স্তুপ আকৃতি জিনিস মনে হছ্ছিল তা আসলে স্কুল পড়ুয়া বেশ কয়েকজন কিশোর ছেলের মাথা । প্রায় দশ বারোজন ছেলে সবাই মাথা এক সাথে করে মাঠে বসে আছে কি যেন করছে । অনেকটা রাগবী খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়রা যেভাবে সবার মাথা এক সাথে করে তাদের খেলার প্লান ঠিক করে সেই ভাবে ঐ কিশোর গুলো বসে ছিল। আমি খানিকটা কৌতুহল বোধ করলাম । তাই আরেকটু এগিয়ে গেলাম। দেখলাম একজন কিশোর ছেলে একটা মোবাইল ধরে আছে আর সবাই মন দিয়ে সেই মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। এই সন্ধ্যায় কিশোর ছেলে গুলো বাসায় না যেয়ে মাঠে বসে মোবাইলে কি দেখছে ? তা দেখার জন্য আরেকটু এগিয়ে গেলাম । গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার মত রুচি আর হল না । ছিটকে দুরে সরে গেলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হায়রে আমার দেশ কি তার অধঃপতন। এই কিশোররা আজ যে ভাবে নীল ছবিতে আসক্ত হয়ে যাছ্ছে তা সমাজের জন্য অশনী সংকেত। এই নীল ছবি তাদের মন মানসিকতাকে বদলে দিছ্ছে । সমাজে তৈরী হছ্ছে অকাল বয়সী যৌন কাতরতা। সামাজিক অবকাঠামোতে এক ন্যাক্কার জনক পরিবর্তন হছ্ছে । এই কারনে নিজেদের আপন বিপরীত লিংগের জন্য এক ভয়ংকর সমস্যা তৈরী হয়েছে। যা হয়ত লোক লজ্জার ভয়ে গোপন থেকে যাছ্ছে । স্কুল কলেজগুলতে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক । ঘরে ঘরে আজ দেহজ প্রেমের বন্যা । কত অনাচার আর পাপাচারে ভরে যাচ্ছে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ এই বাংলাদেশ। তার কয়টা বা আমরা জানি । কয়টা খবরই বা আসে খবরের কাগজে । তাইতো আজ ডাস্টবিনে নালায় পাওয়া যায় মৃত নবজাতকের লাশ।
ছোট ছোট কিশোর ছেলে-মেয়েদের মাঝে অহরহ জন্ম নিছ্ছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক । বেশ কিছুদিন আগে এক দৈনিক পত্রিকায় দেখেছিলাম বাংলাদেশের মহানগরগুলোর প্রায় কিশোর-কিশোরী আঠার বছর হওয়ার আগেই তারা যৌন অভিগ্গতা অর্জন করে ফেলে । ওদের এইসব সম্পর্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত বিব্রত হছ্ছে পিতা-মাতা , সমাজ ও রাষ্ট্র । গোপনে গোপনে আজ কত কুমারী মাতা তৈরী হছ্ছে কয়টা আমরা জানি। এই কিশোর ছেলে-মেয়েরা এই দেশেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম । এরাই হবে দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার। এদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে । তাই এ ব্যাপারে আমাদের কি একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন নয় কি ? বর্তমান পিতা-মাতা শিক্ষকদের উচিত এই ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। এছাড়া আমরা যারা সমাজের দ্বায়িত্বশীল পদে আছেন তারা তাদের নিজ এলাকায় যেই সব মোবাইল দোকানগুলোতে এইসব নীলছবি ডাউনলোড করে । সেই সব দোকানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া । মসজিদের ঈমামদের উচিত এই ব্যাবসা সম্পূর্ন হারাম এই ব্যাপারে জুমার খোতবায় বলিস্ঠভাবে কোরান-হাদিসের আলোকে সাধারন জনগনকে বোঝানো। শিক্ষকদের উচিত তাদের ক্লাসে এই ব্যাপারে কৌশলে ছাত্র-ছাত্রীদের এর অপকারিতা বোঝানো । যেই ছাত্র-ছাত্রী মোবাইল ব্যাবহার করে তাদের পিতা মাতা বা অভিবাভকদের উচিত মাঝে মাঝে তাদের মোবাইল হঠাৎ চেয়ে নিয়ে চেক করা । এতে ওরা সাবধান থাকবে । ঘরে ঘরে ডিশের মাধ্যমে যে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে তার বিরুদ্ধে সকল সাধারন জনগনের এখনই সচেতন হওয়া। দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ ধর্মের বেশি বেশি চর্চা করা। তাহলেই তৈরী হবে সুন্দর পরিবেশ , সুন্দর সমাজ , তৈরী হবে শক্তিশালী উন্নত রাস্ট্র ।
সুস্থ, সুন্দর, নিস্পাপ মনের আজকের কিশোর-কিশোরীরাই গড়তে পারে আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ।

একটি উপদেশ । ( প্রত্যেকের পড়া উচিত )

যে কোন পিতা-মাতার বিবাহ যোগ্য মেয়েটির যখন বিয়ে হয়ে যায় , তখন সেই মেয়েটি প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসে তখন তার মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
তখন প্রায় মেয়ে বলেঃ ভালো। তবে মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও কেমন কেমন । আমার ভাল লাগে না ।
মেয়ের ভেতর একধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা। তখন মায়েদের মনটা খারাপ হয়ে যায় । তারপরও মায়েরা নিজেদের মনের হতাশ ভাবটা লুকিয়ে রেখে বলেঃ একটু ধৈর্য ধর তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে ।
( এখন যা লেখব তা এরকম একটি নববধুকে তার মায়ের দেওয়া শিক্ষনীয় ঘটনা। )
এক নব বিবাহীতা মেয়ে প্রথম শ্বশুর বাড়ি থেকে তার বাপের বাড়িতে আসে । তখন তার মা খুব আগ্রহ ভরে জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন লেগেছে ?
তখন মেয়ে বলেঃ ভালো। তবে মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও কেমন কেমন । আমার ভাল লাগে না ।
মেয়ের ভেতর একধরনের হতাশা দেখতে পায় তার মা।
ঐ মা মেয়েকে আর কিছু বলল না । মেয়ে মনের আনন্দে বাপের বাড়ি বেড়াতে লাগল । বিয়ের পর মেয়েটি এখানে এসে দেখতে পেল অন্যরকম এক ভালবাসা । যা আগে কখনও পায়নি । সবাই ওকে খুব স্নেহ করে ভালবাসে । ও যখন যা চাইছে তাই হাজির হয়ে যাছ্ছে । সে যেন তার চির চেনা বাবার বাড়িতে মহামান্য অতিথি । সবার স্নেহ আর ভালোবাসা ওর জন্য উপচে পড়ছে । এই সময় শ্বশুর বাড়ির কথা মনে হলে মনটা আনমনে ভারাক্রান্ত হয়ে যায় । এখানে ( বাপের বাড়ি ) কত চেনা মধুর পরিবেশ আর ওখানে ( শ্বশুর বাড়ি ) সবাই অচেনা সবাই কতৃত্ব পরায়ন। দু একজন আছে খুবই স্নেহশীল । তারপরও কেমন যেন পর পর ।

দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। মেয়ের চলে যাবার সময় চলে আসে। চলে যাবার ঠিক আগের দিন মা তার মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করেন। মা চুলায় আগুন জ্বালিয়ে পানি ভর্তি একটা হাড়ি তুলে দেন এবং তা গরম করতে থাকেন। একসময় যখন হাড়ির পানি ফুটতে শুরু করল, তখন মা হাড়িতে গাজর, ডিম আর কফির বিন দেন। এভাবে প্রায় পনের বিশ মিনিট জ্বাল দেন । তারপর মা আগুন নিভিয়ে চুলা থেকে হাড়িটা নামান। এরপর হাড়িতে জ্বাল দিয়ে সিদ্ধ করা গাজর, ডিম এবং কফির বিন ঢেলে একটি বাটিতে রাখেন।

এবার তিনি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন
ঃতুমি এখান থেকে কি বুঝতে পারলে আমাকে বল” ?
মেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে-
ঃআমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর কফির বিন সিদ্ধ করে একটা বাটিতে নিয়েছ।
মেয়ের কথা শুনে মা বললেন-
ঃহ্যাঁ, তুমি ঠিকই দেখেছ। তবে এতে তোমার জন্য একটা উপদেশ আছে । যা বোঝানোর জন্য আমি এগুলো নিয়েছি। “ আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলি বলব, আমার মাও ঠিক এইভাবেই আমাকে এ কথাগুলি বলেছিল। আমি জানিনা কথাগুলি তোমার কতটুকু উপকারে আসবে, তবে আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত করেছিল”।
এবার আমার কথা গুলো খুব খেয়াল করে শুন। কেননা এই উপদেশই হয়ত তোমার নতুন জীবনের পথ চলাতে পাথেয় হবে । আর এই পাথেয় তোমাকে করবে স্বনির্ভর ,আত্মবিশ্বাসী।
বাটিটার দিকে দেখ এখানে রাখা জিনিসগুলো তাদের পূর্বের স্বকিয়তা হারিয়ে অন্য রকম হয়ে গেছে। সিদ্ধ করার আগে গাজর ছিল মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম ছিল খুব হালকা যার ভিতরটা তরল , আর কফির বিন ছিল খুবই শক্ত। কিন্তু যখন এগুলিকে সিদ্ধ করা হল তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম হয়ে গেল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিমের তরল অংশটা শক্ত হয়ে গেল আর কফির বিন পানিতে মিশে সুন্দর ঘ্রান আর মিষ্টি স্বাদে পরিনত হল।
মা কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলতে লাগলেন-
“তুমি যদি তোমার স্বামীর বাড়িতে নিজেকে কঠিনভাবে অর্থাৎ কাচা গাজরের মত উপস্থাপন কর, তবে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোমার সংঘর্ষ হবে তখন তোমার কাঠিন্যর কারনে সবাই তোমাকে মানসিক ও কেউ কেউ শাররিক ভাবে আক্রমন করে তোমাকে দুর্বল করে ঠিক সিদ্ধ গাজরের মতই নরম করে ফেলবে। এতে তোমার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে যাবে ।
যদি তুমি নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন কর অর্থাৎ কাচা ডিমের মত। তবে সবাই অসহায় ও দুর্বল ভেবে তোমাকে কব্জা করে ফেলবে , এরপর আঘাতের পর আঘাত করে তোমার হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে ঠিক ডিমের মত।
কিন্তু তুমি যদি তোমার ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তার অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পার তবে পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন কফির বিন গরম পানির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে পানিকে সুস্বাদু আর চারপাশকে মিষ্টি ঘ্রানে ভরিয়ে দিয়েছে ।
এভাবে যদি তুমি নিজেকে শ্বশুর বাড়িতে মিশাতে পার তাহলে এই বাপের বাড়ির চেয়ে তোমার শ্বশুর বাড়িকে বেশি আপন মনে হবে। ওখানে সবার স্নেহ ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় তুমি হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি বিবাহীত নারী ।

লেংটা ফকির ও তার অদ্ভুত জীবন ধারা ।



আমরা চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম মাদার বাড়ির মোগলটুলী এলাকায় লেংটা ফকিরের মাজারের সামনে থাকতাম । ওখানেই আমার জন্ম । ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ঐ এলাকায় ছিলাম আমাদের বাসা থেকে প্রায় ষাট সত্তর গজ দুরে ছিল এক পাগলা ফকিরের মাজার । নাম তার ল্যাংটা ফকির । মাজারটা ল্যাংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত ছিল। ওখানে প্রতিদিন এশার নামাযের পর মিলাদ হত। আমার দাদা প্রতিদিন মসজিদে এশার নামায পড়ে মাজারে যেতেন । মিলাদ পড়ে আমাদের জন্য জীলাপি নিয়ে আসতেন। ওখানে প্রতি বছর ওরশ হত । আমি ঐ ওরশে প্রথম ব্যান্ড পার্টি দেখি । ইউনিফর্ম পড়া নানা ধরনের বাদ্য যন্ত্র নিয়ে মার্চ করা লোকদের দেখে আমি ও আমার ছোটভাই মুগ্ধ হয়ে যেতাম। বিশেষ করে বিশাল ঢোল কাধে নিয়ে চলা লোকটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতাম । লোকটা যখন একটা লাঠি নিয়ে ঢোলে বাড়ি দিত তখন ধুম ধুম করে আওয়াজ হত । সেই আওয়াজে আমাদের কচি বুকের খাচায় বসে থাকা হৃদয়টা ধক ধক করে লাফিয়ে উঠত।
তখন লেংটা ফকির জীবিত ছিলেন । ল্যাংটা ফকিরে জীবনটা ছিল অদ্ভুত । হালকা পাতলা ছোটখাট মানুষ । মুখ ভর্তি দাড়ি মোছের জন্গল । প্রায় সময় উলংগ থাকতেন , মাঝে মাঝে শরিরে চটের ছালা জড়ানো থাকতো । মুখে সব সময় থাকতো অশ্রাব গালী-গালাজ । তার ভক্তরা এই গালীকে তাদের প্রতি পীর বাবার দোয়া মনে করে আবেগে আপ্লুত হত । উনার বেশির ভাগ ভক্তই ছিল নারী । এতে আবার কেউ মনে করবেন না উনি নারী লোভী ছিলেন । তিনি আদতে ছিলেন পাগলা ধরনের মানুষ । নারীরা উনার ধারে কাছেও ঘেষতে পারতনা। তিনি যেখানে থাকতেন সেটা ছিল এক রুমের একটা প্রায় আট বাই দশ ফিট আয়তক্ষেত্রের একটা রুম । কামরাটা নানা ধরনে কাগজের বানানো ফুল আর ঝালর দিয়ে সাজানো থাকত । কামরাটা আরও সুন্দর দেখা যাওয়ার জন্য লাগানো ছিল নানা রংয়ের আলোকসজ্জা । ওখানে তিনি একা থাকতেন । তিনি সেখানে সারাদিন বসে থাকতেন । ভক্তরা যে কোন আবেদন নিবেদন করত ঐ রুমের বাইরে থেকে। একটা ভাতের থালা থাকত সামনে , যার বেশির ভাগ ভাতই কামরার ফ্লোরে ছড়ানো ছিটানো থাকত। উনার রুমের সামনে বিশাল একটা ছাতিম গাছ ছিল । এখন নাই উনার মৃত্যুর এক সপ্তাহের ভিতর বিশাল ছাতিম গাছটি উপড়ে পড়ে যায় । সেদিন কোন ঝড় বাদল ছিল না । তবে গাছটা পড়ে যাওয়ার পর দেখা গেল ভিতরটা পিপড়ারা খেয়ে ফাপা করে ফেলেছে । গাছটির চারদিকে সিমেন্ট দিয়ে বাধানো ছিল । সিমেন্ট দিয়ে বাধানো চত্বরে ভক্ত সকল পানি ভর্তি বোতল রাখত । একদিন বিকেলে রেখে গেলে তার পরের দিন বিকেলে নিয়ে যেত । সেই পানি খেলে নাকি রোগ ভাল হয়ে যায় (??? ) । এখনও রাখে তবে আগের সেই জৌলুস নাই।
তার প্রাকৃতিক কর্ম সারার ব্যাপারটা ছিল এক রাজকীয় ব্যাপার। আমরা মাজারের সামনে আমাদের বাসার অনতি দুরে একটা মাঠে খেলতাম । সেই মাঠটার পাশে একটা রাস্তা ছিল । রাস্তার অপর পাশে আরেকটা পুকুরসহ মাঠ ছিল । পুকুরটা ছিল অব্যাবহৃত কচুরিপানয় ভর্তি । ঐ মাঠটায় কেউই তেমন খেলাধুলা করত না । কারন ঐ মাঠটাতে ফকির বাবা প্রকৃতির কাজটা সারতেন । যাইহোক রাজকীয় ব্যাপারটা বলি ।
ল্যাংটা ফকিরের প্রায় পনর-বিশটা পালিত কুকুর ছিল। শুধু পালিত বললে ভুল হবে । তারা ছিল ট্রেনিং প্রাপ্ত। কুকুরগুলো সারাদিন মাজারের ভিতর থাকত । মাজারের বাইরে তেমন একটা বের হত না । কিন্তু ল্যাংটা ফকিরের যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় হত তখন সব কুকুর একসাথে মাজার থেকে বের হয়ে দৌড়ে মাঠটাতে আসত। ঐ সময় ঐ মাঠে কেউ থাকলে ঘেউ ঘেউ শব্দ তাকে তাড়াত। মাঠে উপস্থিত মানুষ বা গরু ছাগল তখন যদি সরে না যেত তাহলে সব কুকুর মিলে তাকিএ আক্রমন করত। এরকম অবস্থায় একবার একটি দশ-বারো বছরের মেয়ের উরু থেকে কামড়ে গোশত নিয়ে ফেলেছিল । যাই হোক মাঠ খালি হয়ে গেলে কুকুরগুলো আবার মাজারে ফিরে যেত । কিছুক্ষন পর আবার আসত । এবার আসত ঘেউ ঘেউ করতে করতে রাস্তা থেকে যে কোন মানুষকে তাড়িয়ে দিত । এদের পিছে পিছে বেশির ভাগ নারী ও কয়েকজন পুরুষ ভক্ত পরিবেষ্টিত ল্যাংটা ফকির বাবা । তিনি এসে একা মাঠে চলে যেতেন । ভক্তরা রাস্তার উপড় দাড়িয়ে দাড়িয়ে খোলা মাঠে তার মল-মূত্র ত্যাগ করার ঐতিহাসিক দৃশ্য উপভোগ করত। কিছুক্ষণ পড় বাবাজানের কর্ম সম্পাদন হলে তিনি শৌচকার্য ব্যাতিত উঠে মাজারের দিকে চলে যেতেন । তখন কুকুরগুলো সেই মলগুলো .........।
ল্যাংটা ফকিরের একটা ভাল গুন ছিল । তাহল তার মাতৃভক্তি । কোন ভক্তের কোন আবেদনে তিনি যদি সাড়া না দিতেন তাহলে সেই ভক্ত তার মায়ের কাছে যেয়ে যদি বিচার দেয় তখন তার মা এসে এক ধমক দেওয়ার সাথে সাথে ল্যাংটা ফকির সেই ভক্তের আবেদন গ্রহন করতেন । ল্যাংটা ফকিরের বয়স যখন প্রায় চল্লিশ ( চুল দাড়িতে ঢাকা চেহারা দেখে তার বয়স আন্দাজ করা কঠিন ) তার সেই প্রিয় মা মারা যায় । মা মারা যাওয়ার পর সে সারাদিন কান্না করত । খাওয়া দাওয়া করত না জোর করে খাওয়াতে হত। এরপর এক মাসের মধ্য সে নিজেও মারা যায়।
আমরা ঐ এলাকার অধিবাসীরা তার যাবতীয় বুজরুকি পছন্দ না করলেও তার মা ভক্তির কারনে তাকে শ্রদ্ধা করতাম।

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

আম্মা ও উনার বই পড়া ।

মা ছোট্ট একটি বাক্য । কতইনা মধুর । মা নামের আরও উপনাম আছে আম্মা , মাম্মি , মাম ।

আমরা আমাদের মাকে কখনও মা ডাকিনি । আমরা সব সময় আম্মা বলে ডাকতাম । অসুখে হোক , বিপদে হোক , আনন্দে হোক, বেদনায় হোক আমরা সব সময় আম্মা বলেই ডাকতাম। আমার আম্মা ছিলেন হুবহু বাংলাদেশের একজন প্রধান মন্ত্রীর মতন । চেহারায়, গায়ের রংয়ে, লম্বায়, এমনকি ব্যাক্তিত্বে প্রায় এক রকম। তবে প্রধান মন্ত্রীর মতন আর্টিফিশিয়াল কোন মেকাপ করতেন না । সাধারন সাজগোছেই আম্মা থাকতেন অসাধারন । উনার আত্মসম্মান বোধ ছিল খুবই প্রখর । আমারা আম্মাকে আপনি বলে সম্বোধন করতাম । একদিন আমি কি কারনে যেন তুমি বলে সম্বোধন করেছিল । যেই না তুমি বলেছি তারপর আমার উপর শুরু হয়েছিল কঠিন তিরষ্কার আর বকাবকি । এরপর আর কোনদিনও তুমি ডাকার মত ভুল করিনি। আম্মা ছিলেন শিক্ষিত রুচিশীল সদা হাস্যময় প্রানচান্চল্য ভরপুর। যে কোন অনুষ্ঠানে গেলে আমার আম্মা একাই মেয়ে মহলটাকে হাস্যরসে ভরপুর করে রাখতেন। এজন্য ছোট বড় সব মহিলারা যে কোন অনুষ্ঠানে আম্মাকে পেলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠত। এত গল্প কৌতুক তিনি জানতেন যে কখনও তার জানার পরিধি পরিমাপ করা যেত না। আর জানবেন নাই বা কেন । কারণ তিনি প্রচুর বই পড়তেন । আমার নানিও ছিলেন নাকি বইয়ের পোকা । আমরা চার ভাইও তেমন বইয়ের পোকা । আমার মেয়েতো হুবহু আমার আম্মার মত গঠনে গাঠনে মেজাজ চলাফেরা এমনকি বই পড়াটাও ,এতটুকু অমিল নাই । যদিও ওর বয়স মাত্র সাড়ে এগার।

বই পড়ার ব্যাপারে আম্মার কোন বাছ বিচার ছিল না । ছোট কালে দেখেছি চুলার পাড়ে রান্না করতে করতে বই পড়ছেন । অনেক সময় বই পড়ায় মশগুল থাকাতে চুলার দুধ বা ডাল উথলে নিচে পড়ে যেত । অসম্ভব বইয়ের পোকা ছিলেন তিনি। বাজারে ঠোংগার নিচে যে কাগজটা থাকত সেটাও উনার পড়া চাই । ( আমাদেরও এই স্বভাবটা আছে । উনার থেকেই পাওয়া। )। উনি একজনের একটি বিছানায় একাই শুতেন। এশার নামাযের পর অনেকক্ষন কোরান শরীফ পড়তেন । তারপর ভাত খেয়ে শুয়ে পড়তেন । বেশ মোটা ছিলেন তাই শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন। বয়স হওয়ার পর রাতে সহজে ঘুম আসতনা বলে অনেক রাত পর্যন্ত লাইট জ্বালিয়ে বই পড়তেন । পড়তে পড়তে চোখ ঘুম আসলে গভীর রাতে বিছানা থেকে উঠে লাইট নিভাতে কষ্ট হত বলে , উনার বিছানার পাশে ছোট একফুটি টিউব লাইট লাগিয়ে দিতে হয়েছিল। উনার বিছানায় সারাদিন নানা ধরনের বই পড়ে থাকত । মাসিক মদিনা , ইসলামিক গল্প ,বেগম ( মহিলা লেখিকাদের পত্রিকা ) ঝিনুক ( অনেক আগের সিনেমা পত্রিকা ) ভ্রমন কাহিনী, মাসুদ রানা , রহস্য পত্রিকা , বিচিত্রা, শারদীয় পূজা সংখ্যা , আরও কত কি বই । এর মাঝে উর্দু গল্পের বইও ছিল। তিনি উর্দু ও হিন্দি দুই ভাষাই পড়তে ও লিখতে পারতেন । উনার জন্য আমি অমর বই ঘর , ফুটপাতের পুরাতন বই বিক্রেতার কাছ থাকে উর্দু বই খুজে খুজে আনতাম। রহস্য পত্রিকা হকার থেকে নিতাম। আমার পিঠেপিঠি ছোট ভাই মেজটা আনত শারদীয় পূজা সংখ্যা ।

জীবনের শেষ দিকে উনার যখন ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে তখন একবার কেমো থেরাপি দেওয়ার পরই চোখের দৃষ্টির চরম ক্ষতি হয় । তখন উনার সেকি কান্না । বার বার আমাদের বকাবকি করছেন চশমার পাওয়ার বাড়িয়ে আনার জন্য। আমরাও উনার আবদার মত পাওয়ার দ্বিগুন করে আয়না এনে দিলাম তারপরও পড়তে পারছেন না, তাই আবার আরও দ্বিগুন পাওয়ারের আয়না এনে দিলাম তারপরও বই পড়তে পারেন নি। বই পড়তে না পারার যে আক্ষেপ ও বেদনা উনার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ করত তা বাইরে থেকেও বোঝা যেত । বিছানায় মাথার পাশে রাখা ছড়ানো ছিটানো বই গুলো দেখে দেখে বইগুলোর উপর উনার দুর্বল কোমল হাত বুলিয়ে দিতেন আর নোনা চোখের জলে স্রষ্টার কাছে অভিযোগ করতেন হে প্রভূ রোগ দিয়েছ মেনে নিয়েছি, চোখের দৃষ্টি কেন কেড়ে নিলে ? যে কদিন বেচে আছি সে কদিন কোরান তেলোয়াত আর বই পড়া ছাড়া কি করে বাচব বল?

আমার আম্মা থেকে শোনা অনেক গল্প থেকে একটি গল্প দিলাম পড়ে দেখুন কেমন হাস্যরসে ভরপুর।

কুচমহল।

অনেক আগে ভারত উপমহাদেশে এক বাদশাহ ছিল। বাদশাহর খাবার মেনুতে অনেক দামি খাবার থাকলেও বাদশার প্রিয় খাবার ছিল কচু শাক। একদিন বাদশাহর সেই প্রিয় খাবার একদিন বিড়ালে রান্নাঘর থেকে চুরি করে খেয়ে ফেলল। এরপর বার্বুচি মহাচিন্তায় পড়ে গেল, দরবার ভর্তি দেশি-বিদেশী এত লোকের সামনে কিভাবে বাদশাহকে এই খবরটা দেবে। দরবারের লোকেরা যদি শুনে বাদশাহ কচু শাক খায়...। দরবারের সবাই ছি ছি করবেনা। হঠাৎ বার্বুচির মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। বের করে ফেলল বাদশাহকে ঘটনাটা কিভাবে বলতে হবে। সে রান্নাঘরে বেশ কিছুক্ষন দৌড়ে গায়ের ঘাম বের করল, তারপর যুদ্ধের পোষাক পড়ে দৌড়ে দরবারে প্রবেশ করল । বাবুর্চির যুদ্ধের পোষাক পড়া ঘর্মাক্ত দেহ দেখে বাদশাহতো অবাক!

বাবুর্চি হাপাতে হাপাতে উচ্চ কণ্ঠে বলল:হুজুর হুজুর আপকা কুচ মহল লুট গেয়া । (হুজুর আপনার কাচের মহল লুটে নিয়ে গেছে ।) ।

বাদশাহ প্রথমে বার্বুচির কথা বুঝতে না পারলও কিছুক্ষন পড়ে বুঝতে পারল । বুঝতে পেরে রাগের সাথে গদি থেকে উঠে চিৎকার করে বলল:কৌন লুট লিয়া?(কে লুটে নিয়েছে?)।

:হুজুর বেলাওয়ার খা লুট লিয়া।

বাদশাহ বুঝতে পারল বেলাওয়ার খা অর্থাৎ বিড়াল।

বাদশাহ রেগে মেগে বলল:কুতুবুদ্দিন খা (কুকুর) কো লেলা দো।(কুতুবুউদ্দিন খা অর্থাৎ কুকুরকে ওর পিছনে পাঠিয়ে দাও।)

দরবারের সবাই বাদশাহ আর বার্বুচির কথা শুনেত অবাক।বাব্বাহ কত বড় বাদশাহ তার কুচ মহল আছে। আবার কুচ মহল পাহারা দেওয়ার জন্য সেনাপতি কুতুবুদ্দিন খা ও আছে। এমন বাদশার দরবারে বসতে পেরে সবাই নিজেকে নিয়ে গর্বিত বোধ করতে লাগল।

(এই গল্পটি আমার মার কাছ থেকে শোনা।উনি আজ প্রায় সাত বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন)