অনুবাদ করুন ।

সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

কিশোর কিশোরীদের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন নয় কি ?

আমি কিছুটা স্বাস্থ্য সচেতন তাই প্রতিদিন কিছুটা হালকা ব্যায়াম করি । সারাদিন কাজের ব্যাস্ত্যতায় সময় হয় না ,তাই মাগরিবের নামাযের পর সন্ধ্যায় বের হই । আমার দোকানের কিছু দুরেই জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ । মসজিদের সামনে বিশাল মাঠ । মাঠে নামার আগে আমি প্রথমে হালকা ব্যায়াম করে নেই । তারপর দৌড়ও নয় হাটাও নয় এই ভাবে একটানা এক মাইল ( আমি আন্দাজ করে ১৭৬০ গজ মেপে এক মাইল জায়গা নির্দিষ্ট করে নিয়েছি ।) হাটাদৌড় দেই । প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ব্যায়ামটা করার চেষ্টা করি। এতে আমার শরীর দারুন ফিট থাকে। নিজেকে সব সময় মনে প্রানবন্ত ও উছ্ছল। এইভাবে প্রতিদিন ব্যায়াম করি।
একদিন মাগরিবের নামায পড়ে হালকা ব্যায়াম করতে এসে মাঠের দিকে তাকিয়েই মেজাজটা বিগড়ে গেল। আমার হাটাদৌড়ের নির্দিষ্ট জায়গার মধ্য কারা যেন স্তুপ করে কি যেন ফেলে রেখেছে । সন্ধ্যার আলো-আধারীতে দুর থেকে স্তুপ করা জিনিসগুলো ভাল মত দেখা যাছ্ছে না । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলেও কিছু করার নেই ব্যায়ামতো করতেই হবে । তবে আজ নির্দিষ্টি পথে যাওয়া যাবে না । একটু ঘুর পথে যেতে হবে । যাই হোক প্রথমে হালকা ব্যায়াম সেরে নিলাম তারপর হাটাদৌড় শুরু করলাম । হাটাদৌড় দিয়ে স্তুপ আকৃতি জিনিসটার দিকেই আসতে যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কগাছে উঠার উপক্রম। একি দেখছি এত কোন স্তুপ আকৃতি কোন জিনিস না। দুর থেকে যা স্তুপ আকৃতি জিনিস মনে হছ্ছিল তা আসলে স্কুল পড়ুয়া বেশ কয়েকজন কিশোর ছেলের মাথা । প্রায় দশ বারোজন ছেলে সবাই মাথা এক সাথে করে মাঠে বসে আছে কি যেন করছে । অনেকটা রাগবী খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়রা যেভাবে সবার মাথা এক সাথে করে তাদের খেলার প্লান ঠিক করে সেই ভাবে ঐ কিশোর গুলো বসে ছিল। আমি খানিকটা কৌতুহল বোধ করলাম । তাই আরেকটু এগিয়ে গেলাম। দেখলাম একজন কিশোর ছেলে একটা মোবাইল ধরে আছে আর সবাই মন দিয়ে সেই মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। এই সন্ধ্যায় কিশোর ছেলে গুলো বাসায় না যেয়ে মাঠে বসে মোবাইলে কি দেখছে ? তা দেখার জন্য আরেকটু এগিয়ে গেলাম । গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার মত রুচি আর হল না । ছিটকে দুরে সরে গেলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হায়রে আমার দেশ কি তার অধঃপতন। এই কিশোররা আজ যে ভাবে নীল ছবিতে আসক্ত হয়ে যাছ্ছে তা সমাজের জন্য অশনী সংকেত। এই নীল ছবি তাদের মন মানসিকতাকে বদলে দিছ্ছে । সমাজে তৈরী হছ্ছে অকাল বয়সী যৌন কাতরতা। সামাজিক অবকাঠামোতে এক ন্যাক্কার জনক পরিবর্তন হছ্ছে । এই কারনে নিজেদের আপন বিপরীত লিংগের জন্য এক ভয়ংকর সমস্যা তৈরী হয়েছে। যা হয়ত লোক লজ্জার ভয়ে গোপন থেকে যাছ্ছে । স্কুল কলেজগুলতে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক । ঘরে ঘরে আজ দেহজ প্রেমের বন্যা । কত অনাচার আর পাপাচারে ভরে যাচ্ছে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ এই বাংলাদেশ। তার কয়টা বা আমরা জানি । কয়টা খবরই বা আসে খবরের কাগজে । তাইতো আজ ডাস্টবিনে নালায় পাওয়া যায় মৃত নবজাতকের লাশ।
ছোট ছোট কিশোর ছেলে-মেয়েদের মাঝে অহরহ জন্ম নিছ্ছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক । বেশ কিছুদিন আগে এক দৈনিক পত্রিকায় দেখেছিলাম বাংলাদেশের মহানগরগুলোর প্রায় কিশোর-কিশোরী আঠার বছর হওয়ার আগেই তারা যৌন অভিগ্গতা অর্জন করে ফেলে । ওদের এইসব সম্পর্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত বিব্রত হছ্ছে পিতা-মাতা , সমাজ ও রাষ্ট্র । গোপনে গোপনে আজ কত কুমারী মাতা তৈরী হছ্ছে কয়টা আমরা জানি। এই কিশোর ছেলে-মেয়েরা এই দেশেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম । এরাই হবে দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার। এদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে । তাই এ ব্যাপারে আমাদের কি একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন নয় কি ? বর্তমান পিতা-মাতা শিক্ষকদের উচিত এই ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। এছাড়া আমরা যারা সমাজের দ্বায়িত্বশীল পদে আছেন তারা তাদের নিজ এলাকায় যেই সব মোবাইল দোকানগুলোতে এইসব নীলছবি ডাউনলোড করে । সেই সব দোকানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া । মসজিদের ঈমামদের উচিত এই ব্যাবসা সম্পূর্ন হারাম এই ব্যাপারে জুমার খোতবায় বলিস্ঠভাবে কোরান-হাদিসের আলোকে সাধারন জনগনকে বোঝানো। শিক্ষকদের উচিত তাদের ক্লাসে এই ব্যাপারে কৌশলে ছাত্র-ছাত্রীদের এর অপকারিতা বোঝানো । যেই ছাত্র-ছাত্রী মোবাইল ব্যাবহার করে তাদের পিতা মাতা বা অভিবাভকদের উচিত মাঝে মাঝে তাদের মোবাইল হঠাৎ চেয়ে নিয়ে চেক করা । এতে ওরা সাবধান থাকবে । ঘরে ঘরে ডিশের মাধ্যমে যে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে তার বিরুদ্ধে সকল সাধারন জনগনের এখনই সচেতন হওয়া। দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ ধর্মের বেশি বেশি চর্চা করা। তাহলেই তৈরী হবে সুন্দর পরিবেশ , সুন্দর সমাজ , তৈরী হবে শক্তিশালী উন্নত রাস্ট্র ।
সুস্থ, সুন্দর, নিস্পাপ মনের আজকের কিশোর-কিশোরীরাই গড়তে পারে আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন